প্রায় তিন ঘণ্টা পর এই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
দফায় দফায় প্রবল বর্ষণে জোড়া বিপর্যয় কলকাতায় এবং হাওড়ায়। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ভেঙে পড়ল একটি তিনতলা বাড়়ির একাংশ। শনিবার দুপুরে বাড়িটির দোতলার কার্নিশে আটকে পড়েন এক ব্যক্তি। প্রায় তিন ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। অন্য দিকে, বৃষ্টিতে পুরনো বাড়ির পাঁচিল চাপা পড়ে জখম হয়েছেন হাওড়ার এক বাসিন্দা। জোড়া বিপর্যয়ে পুরনো বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রশাসন।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার দুপুরে টালিগঞ্জ থানা এলাকায় দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ওই তিনতলা বাড়িটির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। তার জেরে দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ বাড়িটির দোতলার কার্নিশে আটকে পড়েন সেখানকার এক বাসিন্দা। বাড়ির একাংশের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যান তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী-সহ পুলিশকর্মীরা। তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজ শুরু করেন তাঁরা। তবে দুপুরের ওই ঘটনায় বাড়িটির দোতলার কার্নিশে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আটকে থাকেন ওই ব্যক্তি। প্রায় তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতত ওই হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন তিনি। যদিও ওই ব্যক্তির নামপরিচয় এখনও জানা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বৃষ্টির জেরে কলকাতার মতোই বিপর্যয় দেখা যায় হাওড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে হাওড়ার সালকিয়ার হরদয়াল সুরেখা লেনে ভেঙে পড়ে একটি জরাজীর্ণ বাড়ি। জখম হন অমরনাথ দত্ত নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর তাঁকে উদ্ধার করেন দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা। আহতকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
এই ঘটনায় কলকাতা এবং হাওড়া পুরপ্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্ষণের জেরে দিন কয়েক আগে সালকিয়ার বাঁধাঘাট মোড়ের কাছে একটি দোতলা জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতে পুরপ্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন হাওড়ার বাসিন্দারা।
হাওড়া পুরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪০০ জরাজীর্ণ বাড়ি রয়েছে। বেশির ভাগ বাড়ির দেওয়াল বেয়ে উঠেছে বড় বড় গাছ। কোনও বাড়িতে ইট বেরিয়ে পড়েছে। কোনওটায় বা ছাদ ফেটে জল চুঁইয়ে পড়ছে। বর্ষাকালে কার্যত প্রাণ হাতে করে এ ধরনের বাড়িতে বসবাস করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুরসভার তরফে বিপজ্জনক বাড়ি সারানোর বা তা নিয়ে ব্যবস্থার উদ্যোগ নেই। ফলে যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হাওড়ার বুকে বিপজ্জনক বাড়ির কথা স্বীকার করেছেন পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘শহরে প্রায় ৪৫০টি এ ধরনের বাড়ি রয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু বাড়িতে বিপজ্জনক বোর্ড টাঙানোর পাশাপাশি মালিকদেরও নোটিস পাঠানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁরা কোনও ব্যবস্থা না নিলে পুরসভা পদক্ষেপ করবে।’’