Blue Baby Syndrome

কাঁদলেই নীল, জ্ঞানও হারাত, ‘ব্লু বেবি সিনড্রোম’ আক্রান্ত শিশুর সফল অস্ত্রোপচার কলকাতায়

শিশুটির বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। বাবা পেশায় ছুতোর। জন্ম থেকেই ছেলেটির ঠোঁট এবং টাকরা ছিল চেরা। ঠোঁটটি এমন ভাবে চেরা যে, কিছু খেলে তা চলে যেত শ্বাসনালীতে। শুরু হয়ে যেত শ্বাসকষ্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:০১
representational image of operation

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

একটু পরিশ্রম হলেই নীল হয়ে যেত আড়াই বছরের শিশু। একটু কাঁদলে হাত, নখ, জিভ নীল হয়ে উঠত। বেশি ক্ষণ কাঁদলে জ্ঞান হারাত। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ব্লু বেবি সিনড্রোম’। হার্টের জটিলতার কারণেই এই অবস্থা। পাশাপাশি, শিশুটির ঠোঁট এবং টাকরাও চেরা ছিল। বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভিন্ রাজ্যেও চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল শিশুর পরিবার। অবশেষে বিরল ‘ব্লু বেবি সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত শিশুর সফল অস্ত্রোপচার হল দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অধীনে। সুস্থ রয়েছে সে। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।

Advertisement

শিশুটির বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। বাবা পেশায় ছুতোর। জন্ম থেকেই শিশুর ঠোঁট এবং টাকরা ছিল চেরা। দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কৌশিক মুখোপাধ্যায়কে দেখান তাঁরা। শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ইকো কার্ডিওগ্রামে দেখা যায়, হার্টে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। হার্টের ডান দিকে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। হার্টের কক্ষগুলির মধ্যে একটি ছিদ্রও রয়েছে। সে কারণে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের সঙ্গে মিশে যেত অক্সিজেন ছাড়া রক্ত। এর ফলে রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পেত। চিকিৎসক পাশাপাশি জানিয়েছেন, ঠোঁটটি এমন ভাবে কাটা রয়েছে আড়াই বছরের ছেলেটির যে, কিছু খেলে তা চলে যেত শ্বাসনালীতে। ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হত। ওজন বৃদ্ধি পেত না।

এর আগে মু্র্শিদাবাদ, বেঙ্গালুরুতে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন তার অভিভাবক। কিন্তু তার ওজন এতই কম যে, অস্ত্রোপচার করতে রাজি হননি চিকিৎসকেরা। শিশুটির ওজন ৯ কেজি। যেখানে অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তত ১২ কেজি ওজন হওয়া প্রয়োজন। শারীরিক জটিলতার কারণেই তার ওজন বৃদ্ধি পেত না। আবার তাঁর ঠোঁট, টাকরার অস্ত্রোপচারও করা যেত না হার্টের সমস্যার কারণে। একাধিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও কৌশিক এবং তাঁর সহযোগী চিকিৎসকেরা শিশুটির ওপেন হার্ট সার্জারি করেন। হার্টের ডান এবং বাম কক্ষের মধ্যে ছিদ্র বন্ধ করে দেন। তার পর বেশ কয়েক দিন শিশুটি ভেন্টিলেশনে ছিল। শরীরের উন্নতি হলে, খিদে বৃদ্ধি পেলে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হল। চিকিৎসক জানিয়েছেন, এর পর শিশুটির আরও কোনও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই। চেরা ঠোঁটের অস্ত্রোপচারও করা যাবে সহজেই। তবে তিন সপ্তাহ পর। এখন ঘরে শিশুটির স্যাচুরেশন ৯৯ (অক্সিজেনের মাত্রা)। হাসপাতালে ভর্তির আগে সেই স্যাচুরেশন ছিল ৭০। ছেলে ওঠায় খুশি তার বাবা মহম্মদ জাবির শেখ। জানিয়েছেন, শিশুটির খিদে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়িতে গেলে সে আরও সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তাঁদের আশা।

আরও পড়ুন
Advertisement