Bulldozer Politics in Bengal

বাংলাতেও বুলডোজ়ার-বিতণ্ডা! উত্তর কলকাতায় বিজেপি নেতার বাড়ি ভাঙা নিয়ে পুরসভায় হাতাহাতি

তৃণমূলের দাবি, বিজেপি কাউন্সিলরের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীরা একে-৪৭ উঁচিয়ে মহিলা কাউন্সিলরদের প্রাণে মারার চেষ্টা করে। পাল্টা বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের দাবি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ১৫:২৫
পুরসভায় বুলডোজ়ার-রাজনীতি নিয়ে ধুন্ধুমার।

পুরসভায় বুলডোজ়ার-রাজনীতি নিয়ে ধুন্ধুমার। ছবি: সংগৃহীত।

শহর কলকাতায় শিরোনামে বুলডোজ়ার। শ্যামপুকুর বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা বিজেপি নেতা সুনীল সিংহের বাড়ির অংশ বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় পুরসভা। তা নিয়েই দিনভর উত্তপ্ত শনিবারের পুর অধিবেশন। পুরসভায় তৃণমূল কাউন্সিলরদের সঙ্গে কার্যত হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কাউন্সিলরেরা। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে বিজেপি। পাল্টা বিজেপির দাবি, তৃণমূল কাউন্সিলরেরাই জবরদস্তি মারধর করেছেন তাঁদের।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা স্থানীয় বিজেপি নেতা সুনীল সিংহের অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বুলডোজ়ার চালিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভা। যদিও পুরসভার দাবি, বাড়িতে নয়, বাড়ির বেআইনি অংশ বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েই শনিবার পুর অধিবেশনে সরব হন বিজেপির কাউন্সিলরেরা। অধিবেশনের শেষ প্রান্তে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজল ঘোষ বিষয়টি তোলেন। কিন্তু চেয়ারপার্সন মালা রায় তাঁকে জানান, অধিবেশনে এ নিয়ে আলোচনা করা যায় না। প্রয়োজনে মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে বলেন মালা। তখন সজল পাল্টা মানবিকতার খাতিরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে কোনও নাগরিকের বাড়ি ভেঙে দেওয়া যায় না। দয়া করে মানবিকতার খাতিরে বিষয়টি দেখুন।’’ অধিবেশনে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিজেপি কাউন্সিলরদের সঙ্গে চেম্বারে কথা বলবেন বলে জানান।

অধিবেশন শেষ হতেই বিজেপি কাউন্সিলর ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক শুরু করে দেয়। সেখানে বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা, মীনাদেবী পুরোহিত এবং সজল ঘোষের পাশাপাশি, হাজির ছিলেন অভিযোগকারী সুনীল সিংহ। ছিলেন উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষও। সাংবাদিক বৈঠক মিনিট দশেক চলার পরেই সেখানে প্রবেশ করেন তৃণমূল কাউন্সিলর মহেশ শর্মা। তাঁর প্রশ্ন, কাউন্সিলর ক্লাব শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের জন্য, সেখানে বিজেপির জেলা সভাপতি কী করে সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন! পাল্টা সজলরা বলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই করদাতা। সুতরাং সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করার অধিকার সকলেরই আছে। কাউন্সিলর ক্লাবে চলে আসেন বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত, অসীম বসু, রাজীব দাস, কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর। তার পর দু’পক্ষের কার্যত ধস্তাধস্তি বেধে যায়।

যাঁর বাড়ি বুলডোজ়ার দিয়ে ভাঙার অভিযোগ, বিজেপি নেতা সুনীল সিংহের দাবি, তাঁর বাড়ি ভাঙার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এফআইআর নেওয়া হয়নি। পরে আদালতের মাধ্যমে তাঁর অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়ে। সুনীলের অভিযোগ, তার পর থেকেই তাঁকে নিশানা করা হয়েছে।

তৃণমূলের দাবি, বিজেপি কাউন্সিলর সজলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা তাঁদের উপর চড়াও হয়ে মারধর করেছেন। একে-৪৭ রাইফেল দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরেরা মেয়র ফিরহাদ এবং চেয়ারপার্সন মালার দ্বারস্থ হন। তাঁর কাছে লিখিত ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত, অসীম বসুরা। তাঁদের আবেদন, পুরসভা চত্বরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রবেশ যেন নিষিদ্ধ করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন চেয়ারপার্সন মালা।

প্রসঙ্গত, ইদানীং জাতীয় রাজনীতিতে বুলডোজ়ার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ থেকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর— বুলডোজ়ার ব্যবহারে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। আদালতে ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে বুলডোজ়ারকাণ্ড নিয়ে। বাংলায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুলডোজ়ার রাজনীতির সরব সমর্থক। এমন কি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে আদিত্যনাথের বুলডোজ়ার পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে এ বার বঙ্গ রাজনীতিতেও ঢুকে পড়ল বুলডোজ়ার।

আরও পড়ুন
Advertisement