Body Donation

মৃতদেহ-দুর্নীতি কাণ্ডে চাঞ্চল্য, দেহদান আন্দোলনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

মর্গে মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস (নেক্রোফিলিয়া), বেওয়ারিশ দেহের হিসাবে গরমিল, কঙ্কালের পরিসংখ্যানে ত্রুটি এবং সর্বোপরি, মৃতদেহের দেহাংশ নিয়ে অবৈধ কারবারের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement
জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে একের পর এক দুর্নীতি। তার মধ্যে সব চেয়ে স্পর্শকাতর হিসাবে উঠে এসেছে হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহ নিয়ে নানা কুকীর্তির অভিযোগ। দেহদান আন্দোলনের উপরে সেই খবরের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে নানা মহল থেকে।

Advertisement

মর্গে মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস (নেক্রোফিলিয়া), বেওয়ারিশ দেহের হিসাবে গরমিল, কঙ্কালের পরিসংখ্যানে ত্রুটি এবং সর্বোপরি, মৃতদেহের দেহাংশ নিয়ে অবৈধ কারবারের অভিযোগ উঠেছে। সে সব জানতে পেরে দেহদানে উৎসাহী অনেকেই পিছিয়ে আসতে চাইছেন বলে মতামত প্রকাশ করেছেন। যার জেরে রাজ্যের দেহদান আন্দোলন ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকে উজ্জীবিত করতে যারা বড় ভূমিকা নিতে পারত, খোঁজ নেই তাদেরও। দেহদান আন্দোলনে গতি আনতে কয়েক দশক আগে ‘গণদর্পণ’ সংস্থার জন্ম হয়। এত দিন তারা এ কাজে যোগসূত্রের ভূমিকা নিত। অথচ, এমন পরিস্থিতিতে খোঁজ নেই সংস্থার কারও। সংস্থার নম্বরে ফোন করা হলে তা বেজে যায়। ফলে আন্দোলনে ভাটা পড়লে তা কাটিয়ে ওঠার কাজ করবে কে? উত্তর জানা নেই।

সুস্থ অবস্থায় নিজের দেহদানের অঙ্গীকার করতে হয়। মৃত্যুর পরে মৃতের পরিবার সেই মতো প্রক্রিয়া শুরু করে। দাতার আশপাশের কোন মেডিক্যাল কলেজে দেহের প্রয়োজন রয়েছে, তা দেখে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জানা যাচ্ছে, সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে মেডিক্যাল কলেজে মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। তখন মৃতের পরিবারকে নিজেদের খরচে পিস হেভনের মতো সংরক্ষণাগারে দেহ রাখতে হয়। অথবা, সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের মর্গে তা রাখা হয়। হয়রানি এড়াতে মূলত দ্বিতীয় পথটাই বেছে নেয় শোকার্ত পরিবার।

আর সেখানেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে, যাঁরা ইতিমধ্যেই দেহদানের অঙ্গীকারে আবদ্ধ। তাঁদের কেউ কেউ সেই মতামত পরিবর্তন করা নিয়ে ভাবনাচিন্তাও শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। অনেকের আতঙ্ক, মৃত্যু যদি সরকারি ছুটির দিনে হয়, তখন মর্গে রাখতে হবে দেহ! সেখানে কী কী দুর্নীতি হতে পারে, ভেবেই শিউরে উঠছেন তাঁরা।

বাউড়িয়ার বাসিন্দা তনুশ্রী তরফদার বলছেন, ‘‘মৃত্যুর পরে দেহ জনকল্যাণে ব্যবহার করতে দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে সরকারি হাসপাতালে যে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির কথা জানতে পারছি, তাতে সেই ভাবনায় ইতি টানতে হচ্ছে। ভাল কাজে দেহদান না করতে পারলে খারাপ লাগবে, কিন্তু আরও খারাপ লাগবে দেহ নিয়ে নোংরামি হলে।’’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সুপ্রিয় তরফদার বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, চিকিৎসা শিক্ষার সাহায্যার্থে দেহদান করব। কিন্তু মর্গে দেহ নিয়ে দুর্নীতির খবর পড়ে গা গুলিয়ে উঠছে। মৃতদেহ নিয়েও এমন কদর্য ব্যবসা! তাই নিজের দেহ দুর্নীতির ফাঁদে পড়া আটকাতে দাহ করে দেওয়াই শ্রেয় মনে হচ্ছে।’’

গত বছর আর জি করে মায়ের দেহ দান করেন দমদমের সিঁথির বাসিন্দা নীলাঞ্জনা দে। তারও আগে বাবার দেহ দান করা হয় শহরের অন্য এক মেডিক্যাল কলেজে। মা-বাবাকে দেখে নিজেও সেই পথে হাঁটার পক্ষপাতী নীলাঞ্জনা। মর্গ-দুর্নীতির খবর নীলাঞ্জনাকে আতঙ্কিত করলেও পাশাপাশি অন্য ভাবনার প্রকাশ হচ্ছে তাঁর বক্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘মর্গে মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতির খবর জেনে মনে হচ্ছিল, তা হলে মাকে সে দিন কোথায় ছেড়ে এসেছিলাম! মানসিক যন্ত্রণায় অসহায় লাগছিল। অনেক ভেবে দেখলাম, দান করা দেহ কেউ অনৈতিক ভাবে ব্যবহার করলে সেটা তার লজ্জা। মৃতের পরিবারের নয়। সেখানে বিষয়টিকে মৃতের লজ্জা ভেবে দেহদান থমকে গেলে বড় ক্ষতি হবে ডাক্তারি শিক্ষায়। তাই যতই দুর্নীতি হোক, সুদিনের আশায় দেহদানের অঙ্গীকার থেকে সরব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement