বসিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারকনাথ সেন নামে এক ব্যক্তিকে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির নেপথ্যে থাকা অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে শহরতলির বিভিন্ন ডাকঘরের কর্মীদের একাংশের। সম্প্রতি এই ঘটনায় সমরেশ বিশ্বাস ও দীপক মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। সোমবার বসিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারকনাথ সেন নামে তৃতীয় এক ব্যক্তিকে। এই তিন জনের মধ্যে দীপক ও তারক ডাকঘরের অস্থায়ী কর্মী। ধৃতদের জেরা করে লালবাজারের গোয়েন্দারা ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির চক্রের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র থাকার কথা জানতে পেরেছেন।
ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির চক্র সামনে আসার পরে সোমবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেই তল্লাশিতে উঠে এসেছে, বেশ কয়েকটি ডাকঘরের কর্মীদের একাংশ এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যাদের কাজ ছিল আবেদনকারীর কাছে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়ার নাম করে সেটি ডাকঘর থেকে সংগ্রহ করা এবং তার পরে বারাসতে বসে থাকা চক্রের মাথাদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া। পুলিশ জানিয়েছে, সমরেশ এবং তার ছেলে রিপন এই চক্রের পান্ডা। রিপনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
কী ভাবে সামনে এল ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরির চক্র? লালবাজার জানিয়েছে, একই ডাকঘরের অধীনে বহু পাসপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে বলে গত সেপ্টেম্বর মাসে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগটি এসেছিল ভবানীপুর থানা এলাকা থেকে। সেই মতো ওই থানায় একটি মামলা রুজু হয়। পাশাপাশি, লালবাজারের তরফেও তৈরি করা হয় বিশেষ তদন্তকারী দল।
তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চক্রের সদস্যেরা প্রথমে ভুয়ো নথি জোগাড় করত। এর পরে সেই নথি জমা দিয়ে তৈরি করা হত ভারতীয় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড। সেগুলি দিয়ে আবেদন জানানো হত পাসপোর্টের। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, আবেদন করার ক্ষেত্রে যে ঠিকানা দেওয়া হত, তার সঙ্গে মিল থাকত না সংশ্লিষ্ট ডাকঘরের নাম ও পিন কোডের। বরং, চক্রের সদস্যেরা যেখানে রয়েছে, পিন কোড দেওয়া হত সেই এলাকার ডাকঘরের। যেমন, তদন্তে উঠে এসেছে, পঞ্চসায়র ডাকঘরের অস্থায়ী কর্মী ছিল দীপক। সে কারণে তার কাছে যেত ওই ডাকঘরের পিন কোড সংবলিত পাসপোর্ট। অথচ, সেই পাসপোর্টে বাকি ঠিকানা থাকত উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন পাসপোর্ট পঞ্চসায়র ডাকঘরে আসার পরে দীপক সেটি আবেদনকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে সংগ্রহ করে নিত। এর পরে ওই ভুয়ো পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হত সমরেশ বা রিপনদের হাতে। তারা সেগুলি দুই থেকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের কাছে। তদন্তে উঠে এসেছে, গত কয়েক মাসে এমন ভাবে প্রায় ১২০টি ভুয়ো পাসপোর্ট বানিয়ে তা তুলে দেওয়া হয়েছিল অনুপ্রবেশকারীদের হাতে।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘আপাতত আমাদের নজরে এসেছে এমন কয়েকশো আবেদন। সেগুলি বাতিল করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ওই চক্রের সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে ডাকঘরগুলির সঙ্গেও। এই চক্রে আরও একাধিক জন জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।’’