Baguiati Police Station

‘ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব পুলিশের, আমার গাড়িই চাই’, বলছেন মালকিন

পুলিশের জিম্মা থেকে তিনটি দামি গাড়ি উধাও হয়ে যাওয়ার পরে ব্যবসা লাটে উঠেছে বাগুইআটির বাসিন্দা পাপুন ভট্টাচার্য ও কিশোর ভট্টাচার্যের।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:২৭
অভিযোগ, গাড়ি থানা থেকে উধাও হওয়ার পরে পুলিশের একাংশ বিষয়টির মীমাংসা করতে টাকা দিতে চেয়েছিল।

অভিযোগ, গাড়ি থানা থেকে উধাও হওয়ার পরে পুলিশের একাংশ বিষয়টির মীমাংসা করতে টাকা দিতে চেয়েছিল। —ফাইল চিত্র।

ক্ষতিপূরণ নয়। গাড়ি ফেরত চান তাঁরা। এমনটাই জানাচ্ছেন বাগুইআটি থানা থেকে উধাও হওয়া তিনটি গাড়ির মালকিন। পুলিশের জিম্মা থেকে তিনটি দামি গাড়ি উধাও হয়ে যাওয়ার পরে ব্যবসা লাটে উঠেছে বাগুইআটির বাসিন্দা পাপুন ভট্টাচার্য ও কিশোর ভট্টাচার্যের। তাঁদের অভিযোগ, গাড়ি থানা থেকে উধাও হওয়ার পরে পুলিশের একাংশ বিষয়টির মীমাংসা করতে টাকা দিতে চেয়েছিল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিধাননগর কমিশনারেটকে ওই ঘটনা নিয়ে তুলোধোনা করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিধাননগরের নগরপালকে হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, এ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে। একটি থানা থেকে তিনটি গাড়ি কী ভাবে উধাও হয়ে গেল, তা নিয়ে বিস্মিত কোর্ট।

এর পরেই নড়ে বসে বিধাননগর কমিশনারেট। কমিশনারেট সূত্রের খবর, গাড়িগুলি যখন বাগুইআটি থানায় আনা হয়, তখন সেখানকার আইসি ছিলেন কল্লোল ঘোষ। তিনি বর্তমানে নিউ টাউন থানায় কর্মরত। দম্পতির আইনজীবী তীর্থঙ্কর ঢালি বলেন, ‘‘তিনটি গাড়ি থানা থেকে উধাও হয়ে গেল, এটা অবিশ্বাস্য।’’

পাপুন ও কিশোর জানাচ্ছেন, ভাঙড়ের কাশীপুরে তাঁদের চারটি গাড়ি এক ব্যক্তি ব্যবসার জন্য নিয়েছিলেন। তিনি কোনও টাকা না দেওয়ায় ২০১৭ সালে তাঁরা বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই চারটির মধ্যে তিনটি গাড়ি পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। আর একটি গাড়ির এখনও হদিস নেই।

পাপুন জানান, এর পরে তাঁরা নিয়মিত থানায় গিয়ে তিনটি গাড়ি দেখে আসতেন। তিনি বলেন, ‘‘তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার বলেছিলেন, চতুর্থ গাড়িটি উদ্ধার করে একসঙ্গে সব ক’টি ফেরত দেবেন। এর পরে কোভিড চলে আসে। ২০২১ সালে আদালতের অর্ডার নিয়ে থানার কাছ থেকে গাড়ি ফেরত চাই। তখন পুলিশ জানায়, তিনটি গাড়িই পাওয়া যাচ্ছে না।’’

সেই সময়ে বাগুইআটি থানায় কর্মরত ছিলেন নিউ টাউনের বর্তমান আইসি কল্লোল। পাপুনের অভিযোগ, ‘‘কল্লোলবাবু এবং তার পরের আইসি শান্তনু সরকারের কাছে বার বার গেলে ওঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বারাসত আদালতে আমরা অভিযোগ দায়ের করলে বাগুইআটি থানার পুলিশ প্রতি বার শুনানির দিনে গিয়ে সময় চেয়ে নিয়েছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, ২০২১ সালে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে কেন বাগুইআটি থানার পুলিশ চলতি বছরের মার্চে ওই গাড়ি উধাও ঘিরে মামলা রুজু করল?

পাপুনের অভিযোগ, ‘‘বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলে পুলিশের তরফে টাকা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চারটি গাড়ি উধাও হওয়ার পর থেকে আমার ব্যবসা বন্ধ। গাড়ি ফেরত চাই। বিধাননগরের নগরপাল, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, সর্বত্র এই ঘটনার কথা জানিয়েছি।’’

ওই সময়কালে তিন আইসি-র মধ্যে কল্লোল ছাড়া শান্তনু সরকার বর্তমানে ডানকুনি থানায় এবং সঞ্জয় ঘোষ নামে আর এক আইসি মালদহের একটি থানায় কর্মরত। ঘটনাটি বিচারাধীন বলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।

সূত্রের খবর, ২০২০-’২১ সালে বাগুইআটি থানায় পুরনো গাড়ি নিলামের সময়ে ওই তিনটি গাড়ি নিলামে তুলে দেওয়া হয়েছিল বলে বর্তমানে বিধাননগরে কর্মরত পুলিশের একটি মহল দাবি করছে। ভট্টাচার্য দম্পতি সেই দাবি নস্যাৎ করে জানান, মালখানার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বাগুইআটি থানার পুলিশ। বর্তমানে তিনি প্রয়াত। পাপুনের বক্তব্য, ‘‘মৃতের দিকে আঙুল তোলা সহজ। পরেও তো কেউ মালখানার দায়িত্ব নিয়েছেন। পুলিশের জিম্মা থেকে তিনটি গাড়ি কি ডানা মেলে উড়ে গেল?’’

আরও পড়ুন
Advertisement