সুশান্ত ঘোষ এবং (ইনসেটে) কসবাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আফরোজ় খান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টার নেপথ্যে অনেকে জড়িত। রবিবার আদালতে এমনই দাবি করল পুলিশ। দরকার পড়লে তদন্তকারীরা বিহারে গিয়েও তদন্ত চালাবে বলে জানানো হয়। তদন্তের স্বার্থে কসবাকাণ্ডের ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ আফরোজ় খান ওরফে গুলজ়ারকে হেফাজতে রেখে আরও জেরার প্রয়োজন আছে বলে আদালতে সওয়াল করেন পুলিশের আইনজীবী। সেই আবেদন মেনে বিচারক অভিযুক্তকে ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার নিজের বাড়ির সামনেই সুশান্তকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টা করেন এক আততায়ী। সেই আততায়ী যুবরাজ সিংহকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ গুলজ়ারের নাম। তার পরই শুরু হয় তাঁর সন্ধান। শনিবার বাইক নিয়ে বিহারে পালানোর সময় পূর্ব বর্ধমানের গলসিতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার আদালতে পুলিশ দাবি করে, গুলজ়ারই পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তার নেপথ্যে কী কারণ, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে আদালতে সওয়াল পুলিশের আইনজীবীর।
পুলিশের দাবি, সুশান্তকে খুনের পরিকল্পনা থেকে তা বাস্তবায়িত করার মধ্যে অনেকে জড়িত। তাঁদের সকলকে খুঁজে বার করতে হবে। এমনকি এই ঘটনা বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে কতগুলি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ও খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে বিহারেও যেতে পারেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, ধৃত শুটার এবং ‘চক্রী’ দু’জনেরই আদি বাড়ি বিহারে। শুধু তা-ই নয়, বিহার থেকেই অস্ত্র আনা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন আছে। এই ঘটনার নেপথ্যে আরও কেউ আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার পরই পুলিশি হেফাজতের আবেদন করা হয়। যদিও তার বিরোধিতা করেছেন অভিযুক্তের আইনজীবী। তাঁর দাবি, এত দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন অযৌক্তিক।
কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তকে শুক্রবার খুনের চেষ্টা করা হয়। তাঁকে মারতে স্কুটারে করে দু’জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়ির সামনে গিয়েছিলেন। স্কুটারের পিছন থেকে এক জন নেমে পিস্তল তুলে ধরেন কাউন্সিলরের সামনে। দু’বার গুলি চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু গুলি করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পিস্তলটি কাজ করেনি। সেই সময়ে এক দুষ্কৃতী পালানোর চেষ্টা করলে সুশান্ত এবং তাঁর লোকজন তাঁকে ধরে ফেলেন। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃত শুটার যুবরাজকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ইকবাল নামে এক ব্যক্তি তাঁকে সুশান্তকে ‘ভয় দেখানো’র জন্য বলেছিলেন। পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, গুলজ়ারই নিজেকে ইকবাল বলে পরিচয় দিয়েছিলেন যুবরাজকে। এমনকি, সুশান্তকে মারার জন্য পিস্তলের বন্দোবস্তও করেছিলেন গুলজ়ারই। শুধু একা যুবরাজকে নন, স্কুটারচালককেও একটি পিস্তল দিয়েছিলেন বলে পুলিশি জেরায় দাবি করেন গুলজ়ার। সেই পিস্তলের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রবিবার দুপুরের পর সুশান্তের বাড়ির সামনের খালে ডুবুরি নামায় পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, সেখানেই পিস্তল ফেলে পালিয়ে থাকতে পারেন স্কুটারচালক।