R G Kar Hospital Incident

‘বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাতে হবে’, দিনের উপার্জন ডাক্তারদের দিলেন কাগজ বিক্রেতা

প্রতিদিন শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে খবরের কাগজ বিক্রি করেন অসিত। গত ৪২ বছর ধরে এটাই তাঁর পেশা। তাঁর নিজস্ব কোনও স্টল নেই।

Advertisement
আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৪
অসিত রায়চৌধুরী।

অসিত রায়চৌধুরী।

দিনে যৎসামান্য আয় তাঁর। তবু যে কোনও সামাজিক সঙ্কটে সেই উপার্জনটুকুও উপুড় করে দিতে দ্বিধা করেন না। কলেজ স্ট্রিটের বাসিন্দা, পেশায় কাগজ বিক্রেতা অসিত রায়চৌধুরী জানালেন, আর জি করের নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে নিজের এক দিনের উপার্জন বাবদ অর্জিত ২২০ টাকা দিয়ে এসেছেন ওই হাসপাতালে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে। অসিত বলেন, ‘‘আন্দোলন চালাতে তো খরচ আছে। আমার ক্ষমতা আর কতটুকু! তবু যেটুকু পেরেছি, দিয়েছি। আবার দেব।’’

Advertisement

প্রতিদিন শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে খবরের কাগজ বিক্রি করেন অসিত। গত ৪২ বছর ধরে এটাই তাঁর পেশা। তাঁর নিজস্ব কোনও স্টল নেই। অসিতের কথায়, ‘‘আমি সোজা আর জি করে পৌঁছে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে বললাম, আমার সারা দিনের উপার্জনের ২২০ টাকা আপনাদের আন্দোলনে দিতে চাই। ওঁরা বললেন, এত পরিশ্রম করে উপার্জন করেছেন। এই টাকা কেন দেবেন? উত্তরে বলি, আপনারাও রাত জেগে একটা মেয়ের বিচার চেয়ে আন্দোলন করছেন। আপনাদের পাশে আছি। জানি এই টাকাটা খুব কম। তবু দিতে চাই।’’

অসিতের মতে, নির্যাতিতা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যেতেই হবে। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে তো আমাদের মতো গরিব মানুষই বেশি যান। কত গরিব মানুষের সহায় ছিলেন ওই চিকিৎসক। তিনি বেঁচে থাকলে আমরা তাঁর সেবা পেতাম। মেয়েটির এই পরিণতি মেনে নিতে পারি না। ডাক্তারদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানাতেই আমার উপার্জন দিয়ে পাশে থাকতে চেয়েছি।’’

তবে শুধু আর জি করের ঘটনাই নয়, করোনা-কালেও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অসিত। ‘‘সে সময়ে সব পাইস হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা খিচুড়ি রেঁধে গরিব মানুষদের খাওয়াতেন। আমি মাঝেমধ্যেই খিচুড়ি রান্নার জন্য চাল-ডাল কিনে দিয়েছি। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পাশেও আছি। মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে আন্দোলনকারীদের পাশে গিয়ে তাঁদের সহমর্মিতা দেখিয়েছি’’— বলছেন অসিত।

কোভিডের সময়ে অনেকেই খবরের কাগজ নেওয়া বন্ধ করেছিলেন। সে সময়ে অসিতের উপার্জনও কমে গিয়েছিল অনেকটা। তবু যেটুকু আয় করতেন, তা দিয়েই মানুষের পাশে সাধ্য মতো থাকার চেষ্টা করতেন এই কাগজ বিক্রেতা। তাঁর কথায়, ‘‘জানি, মানুষের জন্য কিছু করলে মানুষই সেটা ফিরিয়ে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement