—নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত এক পড়ুয়াকে আদালত চত্বরে চড় মারার অভিযোগ উঠল এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় ১২ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনের ধারা যুক্ত হওয়ার পর সোমবার তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। মূল গেট দিয়ে তাঁদের আদালতের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক মহিলা আইনজীবীকে ধৃত সত্যব্রত রায়ের জামা টেনে পিঠে চড়-চাপড় মারতে দেখা গিয়েছে। আদালত চত্বরের মধ্যে এই ঘটনায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
যে আইনজীবীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম রমা ঘোষ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘এখন আমার বয়স ৭২। পুলিশ তো ওকে জামাই আদরে গার্ড দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। একটু ফাঁক পেলেই ওকে মাটিতে ফেলে ওর গলায় পা তুলে দিতাম। ওর গলার নলি টিপে ধরতাম।’’
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রথম বর্ষের ওই ছাত্র। তিনি নাবালক ছিলেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হস্টেলের নীচে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিলেন ওই ছাত্র। পুলিশ পরে তদন্তে নেমে জানতে পারে, হস্টেলের একটি ঘরে তাঁকে বিবস্ত্র করানো হয়েছিল। সেই মামলায় সম্প্রতি পকসো ধারা যোগ করেছে পুলিশ। তার পর সোমবারই তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানেই এই ঘটনা ঘটে।
প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ধৃতদের আগলে আদালতের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশকর্মীরা। ঠিক সেই সময় মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক আইনজীবী সত্যব্রতের জামা টেনে ধরেন। পুলিশকর্মীরা অভিযুক্ত পড়ুয়াকে বাঁচিয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁর পিঠে চাপড় মারতে দেখা যায় মহিলা আইনজীবীকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আদালত চত্বরে।
ঘটনাচক্রে, পুলিশ সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, এই সত্যব্রতই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার রাতে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ফোন করেছিলেন। সত্যব্রত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতেন। তাঁর বাড়ি নদিয়ার হরিণঘাটা পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের সন্তোষপুর এলাকায়। সত্যব্রতের বাবা প্রদীপ রায় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সামনে ঠেলাগাড়িতে পেয়ারা বিক্রি করেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে সেলাইয়ের কাজ করেন সত্যব্রতের মা রুমা। হতদরিদ্র পরিবার। তবে ছেলেকে বেসরকারি কনভেন্ট স্কুলে পড়িয়েছেন রায় দম্পতি। পরিবার সূত্রে খবর, ছেলেও বরাবর স্কুলের প্রথম তিন জনের মধ্যে এক জন থেকেছেন। উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছিলেন সত্যব্রত। কল্যাণীর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু দিন পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানকার খরচ চালাতে না পেরে মুর্শিদাবাদের একটি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেন। বাড়ির কাছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও যাদবপুরের পড়ার হাতছানি এড়াতে পারেননি সত্যব্রত।