Child Death Case

এসেছে নয়া অতিথি, সন্তানহারা দশমী ভুলতে চান দম্পতি

দিনটা ছিল ২০২২ সালের দশমীর সকাল। বাড়ির দুর্গাপুজো শেষ। পুরোহিতেরা ফিরে যাবেন, তাই বাড়ির উঠোনে রাখা ছিল বৈদ্যুতিন রিকশা। চালক চাবি রেখে অন্যত্র গিয়েছিলেন।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৩
(বাঁ দিকে) বড় ছেলে অজিতেশের সঙ্গে, ন’মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে অমিত ও পম্পি পোদ্দার (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) বড় ছেলে অজিতেশের সঙ্গে, ন’মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে অমিত ও পম্পি পোদ্দার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

ছন্দে ফিরছে জীবন।

Advertisement

বাড়িতে শোকের পরিবেশ খানিকটা হালকা হয়েছে ন’মাসের ছেলের কান্না-হাসির শব্দে। কিন্তু ঘরে এক জনের ছবিতে চোখ পড়লে শোকস্তব্ধ পরিবেশ যেন দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে। গত দু’টি বছরই পুজো মানে চোখে জল। দশমী মানে হাড় হিম করা আতঙ্ক। পরিবার থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা। তবুও নতুন অতিথির মুখের দিকে চেয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন রাজারহাটের নৈপুকুরের পোদ্দার দম্পতি।

দিনটা ছিল ২০২২ সালের দশমীর সকাল। বাড়ির দুর্গাপুজো শেষ। পুরোহিতেরা ফিরে যাবেন, তাই বাড়ির উঠোনে রাখা ছিল বৈদ্যুতিন রিকশা। চালক চাবি রেখে অন্যত্র গিয়েছিলেন। সবার নজর এড়িয়ে ছ’বছরের বাচ্চাটি রিকশায় চেপে চাবি ঘুরিয়ে দেয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ। রিকশা নিজে থেকে চালু হয়ে সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে উঠোনের দেওয়ালে। রিকশার সামনের কাচ ভেঙে ঢুকে যায় ছ’বছরের অজিতেশের গলায়। অদূরে দাঁড়িয়ে বাবা অমিত পোদ্দার চেষ্টা করেছিলেন ছুটে গিয়ে রিকশাটি থামানোর। কিন্তু, সময় পাননি।

নৈপুকুরের বাসিন্দাদের অনেকের কাছেই সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। তাঁরা জানান, ওই দুর্ঘটনার পরে গত বছর নিয়ম মানতে বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়েছিল। এই বছর থেকে পরিবারের তরফে সেই পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সান্ত্বনার খবর, অমিত আবার বাবা হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী পম্পি ন’মাসের অদ্ভিককে নিয়ে নতুন করে মাতৃত্বের সুখ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েক মাস আগে ছোট সন্তানের অন্নপ্রাশনে আত্মীয়-প্রতিবেশীরা এসে পোদ্দার দম্পতিককে নতুন করে এগিয়ে চলতে উৎসাহ দিয়েছেন।

তবে গত বছরের মতো এ বারও পুজো উপভোগ করার মানসিকতা নেই অমিত-পম্পির। বাচ্চা ছাড়া আর কারও জন্য নতুন পোশাকও কেনেননি তাঁরা। অমিতের কথায়, ‘‘বড় ছেলের ছবি, স্মৃতি সর্বত্র ছড়িয়ে। এখনও স্বাভাবিক হতে পারিনি আমরা। পুজো কেটেছে প্রায় ঘরে বসেই। ন’মাসের বাচ্চার জন্য যতটুকু কেনাকাটা, সেটাই করা হয়েছে।’’

বড় ছেলের ছবি, পোশাক, জিনিসপত্র— সব যত্ন করে রেখে দিয়েছেন পোদ্দার দম্পতি। অমিত বললেন, ‘‘এ শোক তো ভোলার নয়। তবুও ঘুরে তো দাঁড়াতেই হবে। ছোট ছেলের মুখের দিকে চেয়ে আবার সব সাজানোর চেষ্টা করছি।’’

অমিতের প্রতিবেশী-পরিজনেরা তাঁদের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন। অমিতের ঘনিষ্ঠ তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা কল্যাণ লোধের কথায়, ‘‘দু’বছর
আগে সেই দশমীর দিনটা আমরা ভুলতে পারি না। একটা ফুটফুটে বাচ্চার ওই পরিণতির কথা ভাবলে শিউরে উঠি। ছোট ছেলের অন্নপ্রাশনে এসে আমরা ওঁদের মনোবল বাড়াতে চেষ্টা করেছি। আশা করি, ওঁরা ঘুরে দাঁড়াবেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement