আর বিতর্ক চান না মেয়র। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
পার্কিং ফি নিয়ে বিতর্কের পর মুখে কুলুপ এঁটেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম। শুক্রবারের বিতর্কের পর শনিবার আর কলকাতা পুরসভায় আসেননি মেয়র। বরং নিজের ৮২ নম্বর ওয়ার্ড তথা নিজের পাড়া চেতলার রাখী সংঘের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু পার্কিং ফি নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি মেয়র।
বস্তুত, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরেই মেয়রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পুরসভা এলাকার পার্কিং ফি বৃদ্ধি এবং পরে তা প্রত্যাহার করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়েছিল কি না? জবাবে নীরবই ছিলেন ফিরহাদ। এমনকি, ওই প্রশ্নের কোনও জবাব না দিয়েই ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু শেষমেশ সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন ‘বদল’ করায় কথা বলতে সম্মত হন ফিরহাদ। তাঁর তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, পার্কিং ফি সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন করা চলবে না। মেয়রের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, পার্কিং ফি নিয়ে মেয়র আর কোনও ‘বিতর্ক’ চাইছেন না।
পার্কিং ফি নিয়ে কথা বলতে তো নারাজ হয়েছেনই, একই সঙ্গে নির্ধারিত ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিও শনিবার করেননি ফিরহাদ। ওই কর্মসূচিতে মেয়রকে কলকাতার বাসিন্দারা সরাসরি ফোনে প্রশ্ন করতে পারেন। সেখানে উপস্থিত থাকে সংবাদমাধ্যমও। শহরের বিভিন্ন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলার পরে সংবাদমাধ্যমেরও বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে থাকেন মেয়র। একেবারে প্রথমে ‘টক টু মেয়র’ হত প্রতি সপ্তাহের শনিবার দুপুরে। গত প্রায় ছ’মাস ধরে সেটি হচ্ছিল শুক্রবার দুপুরে।
ছুটির দিন না থাকলে প্রতি শনিবার পুরসভায় নিজের দফতরে আসেন মেয়র। শুক্রবার কোনও কারণে ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচি না করতে পারলে শনিবার ফোনালাপে শহরবাসীর সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন তিনি। শুক্রবার ‘গুড ফ্রাইডে’-র ছুটি থাকায় ‘টক টু মেয়র’ হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত ছিলেন, অন্যান্য বারের মতোই শুক্রবার না-হওয়ায় শনিবার ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচি হবে। কিন্তু সেই কর্মসূচি বাতিল হয়ে গিয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের ধারণা, শুক্রবার পার্কিং ফি নিয়ে বিতর্কের পর মেয়র খানিক বিমর্ষ। তাই শনিবার পুরসভায় তাঁর যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করে নিজের ওয়ার্ড এবং বন্দর বিধানসভার কাজকর্মে মনোনিবেশ করেছেন তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহে এটা স্পষ্ট যে, তৃণমূলের অন্দরে ফিরহাদ খানিকটা ‘কোণঠাসা’। তা নিয়ে ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজের ক্ষোভও গোপন করেননি তিনি। পার্কিং ফি বিতর্কে স্পষ্টতই তাঁকে পিছু হটতে হয়েছে। এবং তা হতে হয়েছে দলের চাপে। এই পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে দলের অন্দরেও জল্পনা চলছে। ফিরহাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, আপাতত তিনি ‘জনপ্রতিনিধি’ হিসেবে নিজের কাজ বেশি করে করবেন।
শুক্রবার শহরের পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে আচমকাই বিতর্ক শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে মেয়র ফিরহাদ পুরসভা এলাকায় রাস্তার পার্কিং ফি বৃদ্ধি করেছেন বলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানান তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। মেয়রকে ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে বল ঘোষণাও করে দেন কুণাল। ফিরহাদ পাল্টা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বললে পার্কিং ফি বাড়ানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেব। তবে এটা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যে না বলে দলের ভিতরে বললেও হত!’’
শুক্রবার রাতে কলকাতা পুরসভা এলাকায় রাস্তার পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। যদিও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই টুইট করে তৃণমূল নেতৃত্ব কলকাতা পুরসভাকে পার্কিং ফি প্রত্যাহারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে দেন। টুইটে লেখা হয়, ‘‘কলকাতায় পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য কলকাতা পুরসভাকে ধন্যবাদ জানাই। এই কঠিন সময়ে রাজ্য সরকার বা কলকাতা পুরসভা মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চাপাতে চায় না। মানুষের পক্ষে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। আপনাদের মঙ্গল এবং কল্যাণই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার!’’ পুরসভার তরফে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই দলের তরফে টুইট করে দেওয়ার বিষয়টিও মেয়র ভাল চোখে দেখেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের বক্তব্য। তবে পার্কিং ফি বিতর্ক নিয়ে তিনি মুখ না-খোলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।