আদিবাসী মহিলাদের দণ্ডি কাটানোর ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল উঠেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। ছবি: টুইটার।
চার আদিবাসী মহিলাকে দণ্ডি কাটিয়ে দলে ফেরানো কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। শুক্রবার রাতে বালুরঘাটের তৃণমূল পার্টি অফিসে হওয়া দণ্ডিকাণ্ড নিয়ে তাঁদের নীতিগত অবস্থান জানালেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে শোরগোল উঠেছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে তপন বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক বুধরাই টুডুর উপস্থিতিতে বিজেপির জেলা মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে গোফানগর অঞ্চলের প্রায় ২০০ জন মহিলা এবং তাঁদের পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন শনকইর গ্রামের বাসিন্দা মার্টিনা কিস্কু, শিউলি মারডি, ঠাকরান সোরেন এবং মালতী মূর্মূ। সেই কথা চাউর হতেই চার আদিবাসী মহিলাকে বালুরঘাট নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল মহিলা মোর্চার জেলা সভাপতি প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় তাঁদের। তবে অভিযোগ, বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কাটিয়ে আবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো হয় তাঁদের। চার আদিবাসী মহিলার দণ্ডি কাটার ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, ‘‘দলে কাউকে যোগ দেওয়াতে হলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর ছিল না। দণ্ডি কাটিয়ে দলে যোগ দেওয়ানোর কোনও রীতি তৃণমূলে নেই। কেউ যদি এটা করিয়েও থাকেন, তা হলে অন্যায় করেছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Martina Kisku, Shiuli Mardi, Thakran Soren and Malati Murmu, resident of Tapan Gofanagar, Tapan, joined BJP yesterday. They belong to ST community.
— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) April 7, 2023
Today, TMC goons forced them to return to TMC and punished them by asking to do Dandavat Parikrama. pic.twitter.com/eks61eD2EP
চার মহিলাকে দণ্ডি কাটানোর ভিডিয়ো টুইট করে ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। যিনি ঘটনাচক্রে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদও বটে। সুকান্তের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস আদিবাসী বিরোধী। আদিবাসীদের অসম্মান করতে যা করার, তৃণমৃল তা-ই করেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়কে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এর বদলা নিতে হবে।’’ ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন বিজেপির দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘কেউ চাইলে যে ভাবে খুশি রাজনীতি করতে পারেন। যে কেউ যে কোনও দলে যেতে পারেন। কিন্তু এ ভাবে মহিলাদের অসম্মান মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। প্রয়োজনে মহিলা কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব।’’
যদিও যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই প্রদীপ্তার দাবি, ‘‘গ্রামের সরল মহিলারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নিজেরাই বিজেপিতে যোগদানের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। আর তাই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে তাঁরা নিজেরাই বালুরঘাট কোর্ট মোড় থেকে পার্টি অফিস পর্যন্ত দণ্ডি কেটে এসে আবার তৃণমূলে যোগদান করেন।’’
যাঁদের নিয়ে এত রাজনৈতিক তরজা, সেই মার্টিনা, ঠাকরান, শিউলি এবং মালতী কী বলছেন? মার্টিনা জানান, তাঁদের ‘জোর করে’ তুলে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়েছিল। বিজেপিতে যোগদানের ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতেই তাঁরা নাকখত দিয়ে দণ্ডি কেটে তৃণমূলের পার্টি অফিসে ঢুকেছেন। মার্টিনার কথায়, ‘‘আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়। বিজেপির পতাকা হাতে নিয়েছি ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছেন। তা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। তাই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে আমরা নিজেরাই দণ্ডি কেটে পার্টি অফিস পর্যন্ত গিয়েছিলাম।’’
ঠাকরানের পুত্র সুব্রত সোরেনের আবার দাবি, তাঁর মা কখনও বিজেপিতে যোগদান করেননি। প্রথম থেকেই তৃণমূল করেন। যে দিন বিজেপিতে যোগদানপর্ব ছিল, সে দিন ঠাকরান বাড়িতেই ছিলেন। তবে বাকি তিন জন বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন কি না, সেটি তাঁর জানা নেই বলেই দাবি করেছেন সুব্রত।