সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
দলের বিপর্যয় নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। এবার রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি চরম অনাস্থা প্রকাশ করে খোলনলচে বদলের দাবি জানালেন তিনি। সঙ্গে শোচনীয় পরাজয় নিয়ে মূল্যায়ন করতে পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকেও চিঠি দিলেন এই বাম নেতা।
রাজ্যে ১৭তম বিধানসভা ভোটে সিপিএম তথা বামেরা শূন্য হয়ে গিয়েছে। রায়দিঘি কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন কান্তি স্বয়ং। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘কেন এমন বিপর্যয় হল তার মূল্যায়ন করতে হবে। এই ফলাফলের নিরিখে আমি হতাশ নই। সেই জন্যই তো দল একসময় শুদ্ধিকরণের পথে হেঁটেছিল। সেগুলো নিয়ে দলকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’’ এরপরেই কান্তি দলের সর্বস্তরের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘এখনই দলের সব কমিটি ভেঙে দেওয়া উচিত। শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’’
যদিও, পার্টিকে চিঠি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি পার্টিকে কোনও চিঠি দিইনি। যা বলার প্রকাশ্যেই বলেছি।’’ তবে মুজফ্ফর আহমেদ ভবন সূত্রে খবর, কান্তির চিঠি ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। চিঠি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে পলিটব্যুরো সদস্য তথা বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসুর। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, আগামী মঙ্গলবার কান্তিকে মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বিমানবাবু।
প্রসঙ্গত, ২ মে ফলাফল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন সিপিএমের দু’জন নেতা। প্রথমজন দমদম উত্তর কেন্দ্রের পরাজিত প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য, অন্যজন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে মতামত জানানোয় তন্ময়কে সেনসরড করেছে পার্টি। তবে কান্তি রয়েছেন অবিচল। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘মৌলবাদী শক্তিকে রুখে দিয়ে বাংলার মানুষ সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। তা সে যে নেতৃত্বের মাধ্যমেই হোক না কেন। সংযুক্ত মোর্চা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি। গোল গোল কথা না বলে, এর বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান চাই।’’ তিনি আরও বলেছিলেন,‘‘সংযুক্ত মোর্চা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে রুখতে পারবে মানুষের এই বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পারিনি। এই বিষয়টা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বসে অনুসন্ধান করবেন। সেই অনুসন্ধান যেন অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান হয়। গোল গোল কথা বললে হবে না। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলার মানুষকে, যাঁর নেতৃত্বেই হোক না কেন তাঁরা মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করতে পেরেছেন। রাজ্যবাসী সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন।’’ কিন্তু এবার সরাসরি দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বদলের দাবি তুলে দিয়েছেন।