Calcutta High Court

Calcutta High Court: ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে বিঁধলেন বিচারপতি

বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেছেন, ক্ষমতার উচ্চ স্তরে আত্মম্ভরিতার স্থান নেই এবং এই ধরনের অস্বচ্ছতা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৬
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের প্রশাসনিক দফতরের কাজ নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এ বার ফের একটি নির্দেশে হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিঁধলেন। পাশাপাশি কলকাতা হাই কোর্টের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি।

ঘটনাচক্রে, গত শুক্রবার যে মামলার শুনানিতে তিনি ভার্চুয়াল ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, সোমবার সেই মামলার বিচারের দায়িত্ব ছাড়তে গিয়েই তিনি হাই কোর্টের কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। শুক্রবারের নির্দেশে বিচারপতি ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, অসমাপ্ত মামলাটি যেন পরবর্তী কাজের দিনে তালিকার প্রথমে রাখা হয়। এ দিন মামলার তালিকা হাতে পেয়ে বিচারপতি দেখেন, সেই মামলাটি তালিকায় রাখা হয়নি। তিনি কোর্ট অফিসারকে এ ব্যাপারে খোঁজ করতে বলেন এবং জানতে পারেন, তাঁর অজ্ঞাতেই মামলাটি বিচারের জন্য অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁকে নিয়মমাফিক কিছু জানানো হয়নি বলে নির্দেশে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। নির্দেশে তিনি এ-ও উল্লেখ করেছেন যে, দীর্ঘ ২৫ বছরের আইনজীবী জীবনে এবং কয়েক বছরের বিচারপতি জীবনে তিনি বিচার ব্যবস্থার নিয়মকানুন ভাঙতে শেখেননি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের মাস্টার রস্টার (কোন বিচারপতি কোন মামলার বিচার করবেন তার তালিকা) নির্ধারণ করেন। বিচারপতি ভট্টাচার্য নির্দেশে উল্লেখ করেছেন, এটা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব। কিন্তু তিনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী এক রাতের মধ্যে সেই দায়িত্ব বদলে দিতে পারেন না। এই তালিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের বিধি মেনে চলার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গেই বিচারপতি ভট্টাচার্য তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেছেন, ক্ষমতার উচ্চ স্তরে আত্মম্ভরিতার স্থান নেই এবং এই ধরনের অস্বচ্ছতা বিচার ব্যবস্থার পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।

ওই নির্দেশেই বিচারপতি ভট্টাচার্য উল্লেখ করেছেন, ভার্চুয়াল শুনানির বেহাল দশা নিয়ে তিনি হাই কোর্ট প্রশাসনের এক অফিসারকে শো-কজ় করেছিলেন। সেই উত্তর শুক্রবার বেলা তিনটের পরে তাঁর কাছে জমা না-দিয়ে তাঁর অধীনস্থ এক আধিকারিকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে রেজিস্ট্রার জেনারেল বিচারপতি ভট্টাচার্যের অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্ট অফিসারকে এজলাসের সব নথি জমা দিতে বলেন এবং পরবর্তী কালে জানা যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই তিনি ওই নথি চান। প্রসঙ্গত, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সে সময় পারিবারিক কারণে কলকাতার বাইরে ছিলেন এবং হোয়্যাটসঅ্যাপে তিনি ওই নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন বলে বিচারপতি ভট্টাচার্য তাঁর নির্দেশে উল্লেখ করেছেন। এর পরবর্তী সময়ে হাই কোর্ট প্রশাসন এবং বিচারপতি ভট্টাচার্য ও তাঁর অধীনস্থ অফিসারদের সঙ্গে কী কী হয়েছে, বিশদ বিবরণ এ দিনের নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশে আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক অতীতে হাই কোর্টে খোদ বিচারপতির মুখ থেকে হাই কোর্টের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এমন মন্তব্য শোনা যায়নি। তবে কেন এই মন্তব্য তার ইঙ্গিতও বিচারপতি ভট্টাচার্যের নির্দেশে পেয়েছেন অনেকে। বিচারপতি ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘সব মোমবাতি নৈশভোজের টেবিল সাজানোর জন্য তৈরি হয় না, কিছু মোমবাতি প্রতিবাদ মিছিলেও প্রয়োজন হয়।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement