Kalighater Kaku

রাতেই কেন এসএসকেএমে ইডি? ‘কাকু’র কণ্ঠস্বর নিয়ে বিচারপতি সিংহের ‘গোপন’ নির্দেশনামা এ বার প্রকাশ্যে

বুধবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নিজের এজলাসে রুদ্ধদ্বার শুনানি করেছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। কিন্তু সেই শুনানির পর উচ্চ আদালত কী নির্দেশ দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে এল বৃহস্পতিবার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৯
Justice Amrita Sinha of Calcutta High Court ordered to ED for urgent voice sample test of Sujay Krishna Bhadra

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল ছবি।

প্রায় চার মাস ধরে চেষ্টা করেও সফল হয়নি ইডি। একাধিক বার এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে ফিরে এসেছে তারা। কিন্তু বুধবার রাতে আচমকাই এসএসকেএম হাসপাতালে যায় ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। উদ্দেশ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ। সকালে বা বিকেলে না হয়ে হঠাৎই রাতেই কেন ওই বিষয়ে ‘তৎপর’ হল ইডি। তাদের ওই ‘তৎপরতা’র কারণ নিয়ে নানা মহলেই চর্চা শুরু হয়। আদালতের নির্দেশেই তড়িঘড়ি ইডি ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার তোড়জোড় করে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে রূদ্ধদ্বার শুনানির পরেই কি সক্রিয় হয় ইডি? বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই প্রশ্নের উত্তর অধরাই ছিল। বেলায় প্রকাশ্যে এল আদালতের সেই নির্দেশনামা, যেখানে রীতিমতো সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছিল, যে কাজ চার মাস ধরে করতে পারেনি ইডি রাতারাতি তা করতে হবে। অর্থাৎ, হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, ইডিকে রাতেই সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর নমুনা সংগ্রহ করতে হবে।

Advertisement

গত ১৪ ডিসেম্বর ইডির কলকাতা জ়োনের সহকারী ডিরেক্টর হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে একটি সাত পাতার রিপোর্ট জমা দেন। ওই রিপোর্ট পড়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, ইডি সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা সংগ্রহ করতে পারছে না। আবার ওই রিপোর্টেই উল্লিখিত রয়েছে, এসএসকেএমের হৃদ্‌রোগ বিভাগ জানিয়েছে, সুজয়কৃষ্ণের কোনও ‘গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা’ নেই। অর্থাৎ, কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়ার জন্য যে শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন, সম্পূর্ণ ভাবে তা রয়েছে তাঁর। প্রসঙ্গত, ইডির অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন সংক্রান্ত আদালত (পিএমএলএ কোর্ট) আগেই ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেয়।

বুধবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নিজের এজলাসে রুদ্ধদ্বার শুনানি করেছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। ওই শুনানিতে মামলার বাইরের কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। বন্ধ দরজার ভিতরে শুনানিতে উচ্চ আদালত কী নির্দেশ দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে আসেনি। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তা জানা যায়নি। বিকেলে ওই নির্দেশনামা প্রকাশ্যে আসার পর দেখা গেল, কাকুর কণ্ঠস্বর পরীক্ষা কী ভাবে হবে, কোন সময়ে হবে, নির্দেশে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানিয়েছিলেন বিচারপতি। ওই নির্দেশ কার্যকর না হলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে বলেও তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল।

বিচারপতি সিংহ তাঁর নির্দেশে জানান, সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বর পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে ইডিকে। বুধবারই রাত ৮টার মধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ার জন্য দু’ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় আদালত। জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই সময় অপচয় করা যাবে না। তাই রাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছে যান ইডি আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিল চিকিৎসকদল। সিআরপিএফের ঘেরাটোপে ফাইভ জি অ্যাম্বুল্যান্সে করে সুজয়কৃষ্ণকে এসএসকেএম থেকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই হয় কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ। আবার একই ভাবে রাতেই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এসএসকেএমে।

নির্দেশে শুধু পরিকল্পনা বলে দেওয়াই নয়। ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টরকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সিংহ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এসএসকেএমের সুপারকেও। বলা হয়, ইডির আধিকারিকেরা গেলে তাঁদের হাতে সুজয়কৃষ্ণকে তুলে দিতে হবে। নির্দেশের অন্যথা হলে গোটা প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং দায়বদ্ধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে পদক্ষেপ করা হবে। এ ছাড়া আদালত নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-র ডিরেক্টরকেও। বিচারপতি সিংহের নির্দেশ, কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের সময় সিএফএসএল-এর এক অফিসারকে সেখানে রাখতে হবে। সর্বোপরি, এই গোটা প্রক্রিয়ার উপর আদালতও হয়তো নজর রেখেছিল। হাই কোর্ট সূত্রের খবর, আদালত চত্বরে নিজের চেম্বারে প্রায় রাত ৯টা পর্যন্ত ছিলেন বিচারপতি সিংহ।

রূদ্ধদ্বার শুনানি এবং কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশের পিছনে কারণও জানিয়েছে আদালত। বিচারপতি জানান, ন্যায়বিচার এবং তদন্তের স্বার্থে সব দিক বিবেচনা করেই এই নির্দেশ দিচ্ছে আদালত। একই সঙ্গে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ না হলে তদন্ত এগোচ্ছে না। তদন্ত থমকে রয়েছে। তাই ওই নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন