Junior Doctors Protest

উৎসবমুখী বাংলায় আবার ‘নজরকাড়া’ আন্দোলনের পথে জুনিয়র ডাক্তারেরা! জিবি বৈঠকে তৈরি ‘খসড়া’

নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে অবস্থান উঠবে। তবে আন্দোলন যে চলবে, তা-ও ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০০
Junior doctors are planning another big movement before Durga Puja

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। —ফাইল ছবি।

আশ্বিনের শারদপ্রাতেও আন্দোলনের রংমশাল জ্বালিয়ে রাখতে চান জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই মতো পরিকল্পনাও তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা। মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের জিবি (জেনারেল বডি) সভা ছিল। সূত্রের খবর, সেখানেই দুই থেকে তিন দফা কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুত করে ফেলেছেন তাঁরা। যার প্রথমটি হতে চলেছে শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর। অক্টোবরের গোড়ায় দেবীপক্ষের শুরুতেই তাঁদের আন্দোলনকে আরও বড় রূপ দিতে চান জুনিয়র ডাক্তারেরা। যার মূল দাবি— নির্যাতিতার বিচার। স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংক্রান্ত আরও কিছু দাবি সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন তাঁরা। যার মধ্যে অন্যতম, বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্র থেকে ‘থ্রেট কালচার’ বা হুমকি সংস্কৃতি সমূলে উৎখাত করা।

Advertisement

শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে একটি নাগরিক কনভেনশন করতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অক্টোবরের গোড়ায় কী ভাবে, কেমন আন্দোলন হবে, তা এখনই প্রকাশ্যে না আনলেও জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকে একান্ত আলোচনায় বলছেন, তাঁরা সেই আন্দোলনের ‘অভিঘাত’ সারা বাংলায় পৌঁছে দিতে চান। আরও একটি বিষয়কে সচেতন ভাবেই ‘আঘাত’ করতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তা হল ‘মুখ’। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সামনের সারিতে যাঁরা ছিলেন বা সাংবাদিক সম্মেলনে যাঁরা কথা বলেছেন, অনেকে তাঁদেরকেই এই আন্দোলনের ‘মুখ’ হিসাবে বর্ণনা করছেন। কিন্তু কিঞ্জল নন্দ থেকে দেবাশিস হালদার বা রুমেলিকা কুমারেরা বলছেন, তাঁরা কেউই ব্যক্তিগত ভাবে বা কয়েক জন ‘আন্দোলনের মুখ’ নন। এই আন্দোলনের মুখ ‘মানুষ’। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন যে ভাবে সামাজিক রূপ পেয়েছে, সেটিই ধরে রাখতে চান তাঁরা। সাধারণ মানুষ যেমন জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনই বিভিন্ন সমাজের অংশের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারেরাও সম্পৃক্ত হতে চাইছেন। সেই সব আন্দোলনে যোগও দিচ্ছেন তাঁরা।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, পরের দিন শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনের সামনের অবস্থান উঠবে। তবে অবস্থান উঠলেও আন্দোলন যে চলবে, তা-ও ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। অবস্থান তোলা হবে না কি তা চালিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে জিবি বৈঠকে মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে। সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের জিবি বৈঠকে সেই ‘তিক্ততা’ ছিল না। সব পক্ষই সব পক্ষের মত শুনে, বুঝে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করেছে। প্রথম দফার আন্দোলনে মূলত রাজ্য সরকারের দিকেই ছিল ‘অভিমুখ’। এ বার কেন্দ্র তথা সিবিআইয়ের দিকেও তা ঘোরাতে চাইছেন আন্দোলনকারীরা। যার সূচনা হয়েছিল গত শুক্রবার। স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই মিছিলে বহু সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছিলেন।

পরবর্তী দফায় জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের ১ নম্বর দাবির সঙ্গে ৪ এবং ৫ নম্বর দাবিকেও জুড়তে চেয়েছেন। তাঁদের দাবি সনদের ৪ নম্বরে ছিল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বদল। সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ১০ দফা নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে। জুনিয়র ডাক্তারেরা তারই ‘দ্রুত বাস্তবায়ন’ চান। তাঁদের প্রথম দাবি ছিল, নির্যাতিতার বিচার। তার সঙ্গেই তাঁরা ‘থ্রেট কালচার’ নির্মূল করার দাবি জুড়তে চাইছেন। কারণ, তাঁরা মনে করেন, সরকারি হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা আসলে সেই হুমকি সংস্কৃতিরই অঙ্গ। বুধবার ওই বিষয়ে আরজি কর কর্তৃপক্ষ ১২ জনকে শুনানিতে ডেকেছেন। ভিতরে যখন সেই শুনানি চলেছে, তখনও অভিযুক্তদের দেখে বাইরে স্লোগান দিয়েছেন পড়ুয়া চিকিৎসকেরা।

গত শুক্রবার যখন স্বাস্থ্য ভবন থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল সিজিও কমপ্লেক্স অভিমুখে যাচ্ছিল, তখন প্রায় একই সময়ে হাইল্যান্ড পার্ক থেকে নাগরিক সমাজের ডাকে ‘রিলে মশাল মিছিল’ শুরু হয়েছিল। যা মধ্যরাত পেরিয়ে শেষ হয়েছিল শ্যামবাজারে। সেই মিছিলেই রুবি মোড়ের কাছে এক শিশুকন্যার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পরনের সাদা টি শার্টে আঁকা ছিল একটি চোখ। যে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। নীচে লেখা, ‘এ বারের সব প্রতিমা, তিলোত্তমা তিলোত্তমা’। কার্যত সেই বার্তা নিয়েই পুজোর মুখে নতুন আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে অনেকে লিখতে শুরু করেছেন, ‘ফেস্টিভ্যাল অফ প্রোটেস্ট...কামিং সুন’। আন্দোলনের উৎসব...শীঘ্রই আসছে।

আরও পড়ুন
Advertisement