যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
নানা অপপ্রচার এবং অযথা বিতর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সমস্যা এবং তা সমাধানের রাস্তা খোঁজার চেষ্টাই ধাক্কা খাচ্ছে বলে শিক্ষক, অধ্যাপকদের বড় অংশ মনে করছেন। নানা বিতর্কের আবহেও দেখা যাচ্ছে, সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানের মাপকাঠি কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজের জায়গা ধরে রেখেছে। ধারাবাহিক ভাবে জাতীয় স্তরে ভাল ফল করে আসা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বরং কিছুটা উন্নতিই করেছে। ২০২৪এ বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৭৪১-৭৫০এ থাকা যাদবপুর এ বার ৭২১-৭৩০ র্যাঙ্কে উঠে এসেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও ৭৫১-৭৬০ নম্বরে রয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সে আইআইটি খড়্গপুর রয়েছে ৬০ নম্বরে। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ের একটু পিছনে, কানপুরের থেকে একটু এগিয়ে। আইআইটি বা কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির তুলনায় অনুদান বা পরিকাঠামোগত সম্পদে অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও কিছুটা অসম যুদ্ধেও যাদবপুর ধারাবাহিক ভাবে ভাল করছে বলে অনেকের অভিমত। এ বার কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য দেশের রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয় (৩৮৩) বা পুণে বিশ্ববিদ্যালয় (৬৩১-৪০) যাদবপুরের থেকে কিছুটা এগিয়ে। তবু ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা, মেটিরিয়াল সায়েন্সের মতো বিষয়ে যাদবপুর কিছুটা উন্নতিই করেছে দেখা যাচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় শনিবার বলেন, “কিউএস র্যাঙ্কিংয়ের ফলাফল সার্বিক ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। কিন্তু পরিকাঠামোগত কিছু প্রতিকূলতা ঠেলে যাদবপুরের লড়াই ফেলনা নয়। সেই দিকগুলি আমল না দিয়ে কয়েকটি মহল যাদবপুরকে কালিমালিপ্ত করতে সচেষ্ট।” যাদবপুরের আনুষঙ্গিক সমস্যা নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার একটি সাধারণ সভাও ডেকেছে জুটা।
জুটার বিবৃতিতে দাবি, রক্ষণাবেক্ষণ খাতেই ১০০ কোটি টাকা ঘাটতিতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান গবেষণার দামি যন্ত্রপাতি অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে, দুর্দশায় টিচিং ল্যাবরেটরিগুলি। তা ছাড়া ভবনগুলির ভগ্ন দশা, ক্লাসে বসার জায়গারও অভাব। এই পরিস্থিতির পাশাপাশি পড়ুয়াদের যথাযথ মূল্যায়ণ বা পঠনপাঠন সংক্রান্ত নানা সিদ্ধান্তও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট কাউন্সিল এবং ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় ধাক্কা খাচ্ছে। বছরের পর বছর ছাত্র সংসদ না থাকা এবং স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে নানা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দেরিও যাদবপুরের সমস্যা বাড়াচ্ছে বলে জুটার অভিমত।
যাদবপুরের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এ দিন বলেন, “আমি এখন অনেকটাই সুস্থ। মানসিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেও প্রস্তুত। ডাক্তারের চূড়ান্ত নির্দেশ মেনে সিদ্ধান্ত নেব।” তবে কাল, সোমবার তিনি যাদবপুরে এলেও একাধিক সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনটায় জোর দেবেন, তা যথেষ্ট জটিল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। যাদবপুরে ছাত্র সংসদ গঠন বা কর্ম সমিতির বৈঠক ডাকার জন্য রাজ্য সরকারকে তদ্বির করবেন না পুলিশ ফাঁড়ির বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে জবাব দেবেন, যাদবপুর কর্তৃপক্ষ কী করেন, সেটা দেখার।
যাদবপুরের ছাত্রমহলও পুলিশি তদন্তের ‘বাড়াবাড়ি’ নিয়ে সরব। এখন পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রথম বর্ষের ছাত্র সৌম্যদীপ মোহান্তেরও সামনে পরীক্ষা। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলার কথা। গত ১ মার্চ যাদবপুরে গোলমালের সময়ে উপস্থিত কয়েক জন মানবাধিকার কর্মী রাজা সরখেল, রাংতা মুন্সি প্রমুখ এ দিন পুলিশের ডাক পেয়ে যাদবপুর থানায় গিয়েছিলেন। রাজা সরখেল পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, যাদবপুরের গোলমালের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করে তাঁকে আদালত থেকে জামিন নিতে বলা হয়েছে।
সমাজমাধ্যমে ইন্দ্রানুজ রায় ওই দিন দুপুরে একটি বার্তায় যাদবপুরে অশান্তির পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীকে ডাক দেন। তাঁদের কয়েক জনকে ফোন থেকেও তিনি বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় আহত ইন্দ্রানুজকে হাসপাতালে পাঠাতে তাঁদের মধ্যে কয়েক জন তৎপর ছিলেন বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে।