আবাস-উপভোক্তাদের সরকারি উচ্ছেদ-নোটিস! —নিজস্ব চিত্র।
বহু দিন পর তাঁরা আবাসের বাড়ি পাচ্ছেন। প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকতেই মাটির ঘর ভেঙে পাকা বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করে দিয়েছেন। তার মধ্যেই হঠাৎ সরকারি উচ্ছেদ-নোটিস! সেচ দফতরের এক নোটিসেই ঘুম উড়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকের চাঁচাই নীলকুঠি ক্যানেল বাঁধ এলাকার বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২৩ জানুয়ারি সেচ দফতর নীলকুঠি ক্যানেল বাঁধ এলাকায় বেআইনি ভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করার নোটিস জারি করে। নোটিসে স্পষ্ট লেখা আছে, ‘‘আপনারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ ও জলপথ দফতরের অন্তর্গত দামোদর লেফট বাঁধের উপর সরকারি জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ করেছেন। এর ফলে দামোদর লেফট বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আপনাদের ১৫ দিনের মধ্যে নিজেদের অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। না হলে আপনাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলকুঠি ক্যানেল বাঁধ এলাকায় এ বার ৭০ জনের নাম রয়েছে আবাসের তালিকায়। ইতিমধ্যেই প্রথম কিস্তির টাকাও ঢুকে গিয়েছে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ওই ৭০ জনের মধ্যে বেশ কয়েক জন উপভোক্তা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে নেওয়ার নোটিস পেয়েছেন।
দলুইবাজার ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ধীমান বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানে সেই ১৯৭১ সাল বা তার পর থেকে মানুষ বসবাস করছেন। তাঁরা সকলে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে এখানে পাট্টা পান। তবে সকলের পাট্টার কাগজ নেই। তাঁরা দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। এখন সরকারি নোটিস দিয়ে উচ্ছেদ করার কথা বলা হচ্ছে। এই মানুষগুলো এখন কোথায় যাবেন? এর আগে অনেকেই এখানে ইন্দিরা আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন। পরে প্রকল্পের নাম বদল হলে অনেকেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পান।’’
নীলকুঠি ক্যানেল বাঁধ এলাকার বাসিন্দা নীলিমা মণ্ডল, শোভারানি মণ্ডলেরা জানান, তাঁরা আবাসের প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে তাঁদের মাটির ঘর ভেঙে নতুন পাকা বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এখন সরকারি নোটিস দিয়ে উচ্ছেদ করার কথা বলা হচ্ছে। শোভারানি বলেন, ‘‘আমরা এখানে এত দিন ধরে বাস করছি। সুতরাং আমাদের সকলকে থাকার জায়গা দিতে হবে।’’ উপপ্রধান ধীমান বিশ্বাসও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করে উচ্ছেদের নোটিস দিয়ে দিলে হবে না। এরা পরিবার নিয়ে এখন কোথায় যাবে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
মেমারি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও শতরূপা দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ রকম একটা অভিযোগ পেয়েছি। সেচ দফতরের জায়গায় থাকা উপভোক্তারা কী করে আবাসের টাকা পেলেন, তা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত করে দেখে তবে বলতে পারব।’’