India Bangladesh Border

উত্তরবঙ্গের ‘আগল-হীন’ সীমান্তে সেনা

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ছয় জেলার প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার সীমান্তের ওই ১৯৫ কিলোমিটারই ‘উদ্বেগের’ কারণ।

Advertisement
কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৭:০৬
মাথাভাঙা ১ ব্লকের চেনাকাটা এলাকায় রবিবার শুনশান ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত।

মাথাভাঙা ১ ব্লকের চেনাকাটা এলাকায় রবিবার শুনশান ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত। নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গে ছয় জেলার প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার সীমান্তই এখন বিএসএফের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতির জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একের পর এক সতর্কবার্তায় নজরদারি অনেকটাই বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় করে রাখা হয়েছে সেনাবাহিনীকে।

Advertisement

বিএসএফ সূত্রের খবর, গত কয়েকদিনে সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে সেনা জওয়ানদের নজরদারিও করতে দেখা গিয়েছে। আপাতত, সীমান্ত চেকপোস্টগুলিতে সেনা গতিবিধি কমলেও বাকি সীমান্তের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোচবিহারের শীতলখুচি এবং জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি এলাকায় ও-পারের শতাধিক বাসিন্দা জড়়ো হয়ে এ-পারে ঢোকার চেষ্টা বিএসএফ আটকালেও, ভবিষ্যতে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য বাহিনীকে তৈরি রাখা হচ্ছে। বিএসএফের দু’টি ফ্রন্টিয়ার থেকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ত্রিশক্তি কোর-এর সুকনা সদর দফতরে যোগাযোগ রাখা হয়েছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ছয় জেলার প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার সীমান্তের ওই ১৯৫ কিলোমিটারই ‘উদ্বেগের’ কারণ। এই অংশের বেশিরভাগ অংশেই নদী, জমির সমস্যার জন্য কাঁটাতারের বেড়া নেই। আবার নদীর পারে কাঁটাতার ফেলা থাকলেও তাতে নিরাপত্তা পুরোপুরি সুনিশ্চিত হয় না। তাতে খোলা সীমান্তের সুযোগে ও-পারের শরণার্থী থেকে জঙ্গিরা এ-পারে ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই উন্মুক্ত অংশ নিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সতর্কবার্তা প্রতিটি ফ্রন্টিয়ারে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তে আসা বাংলাদেশিদের ভিড়ে মিশে জঙ্গিরা এ-পারে এসে ‘আশ্রয়’ নিতে পারে। উত্তরবঙ্গের সীমান্তে গঙ্গা, মহানন্দা, ধরলা, পুনর্ভবার মতো নদী-ঘেরা সীমান্তে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ রয়েছে। শুধু জঙ্গিরা নয়, জেলবন্দি দুষ্কৃতীরাও ছাড়া পেয়ে বাইরে ঘুরছে বলে খবর। এদের একাংশ বিভিন্ন ভাবে পাচার, চোরাকারবার-সহ ভারত-বিরোধী নানা কাজেও জড়িত বলে অভিযোগ। এরাও নতুন করে সীমান্তে যাতে ‘সক্রিয়’ হতে না পারে, সে দিকেও খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশিদের ‘এজেন্ট’দের দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে।

বিএসএফের নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক তথা ডিআইজি অমিত ত্যাগী রবিবার বলেছেন, ‘‘পুরো সীমান্তেই নজরদারি আঁটোসাঁটো রয়েছে। তবে খোলা বা কাঁটাতারের ফেন্সিং নেই যে সব এলাকায়, সেখানে বাড়তি নজরদারি রয়েছে।’’ বিএসএফের এক কর্তার সংযোজন, সীমান্ত সামলাতে বিএসএফ যথেষ্ট সক্ষম। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, যে কোনও ‘অবাঞ্ছিত’ পরিস্থিতি তৈরি হতেই পারে। তাই সেনাকে সমন্বয়ে রাখা হয়েছে। দরকার হলেই সীমান্তে সেনাও বিএসএএফের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবে।

সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সীমান্ত রয়েছে কোচবিহার জেলায়, ৫৫০ কিলোমিটার। তার পরেই দক্ষিণ (২৫০ কিমি) উত্তর দিনাজপুর (২২৭ কিমি)। গত তিন দিনে এই বিরাট সীমান্তের গৌড়বঙ্গের অধীনে থাকা প্রায় ৭০০ কিলোমিটার এবং কোচবিহারের দিকে থাকা ৫৫০ কিলোমিটারকে ঘিরেই বিশেষ তোড়জোড়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement