মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
আধার কার্ড বাতিল নিয়ে প্রথম সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের জন্য পৃথক পরিচয়পত্র চালু করার কথাও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তিনি। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ‘অফিশিয়াল ত্রুটি’র কথা মেনে নেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে, কারও আধার কার্ড বাতিল হচ্ছে না। সেই প্রেক্ষাপটে গোটা ঘটনাকে ‘কেন্দ্রের চক্রান্ত’ রুখে দেওয়া হিসাবে দেখাতে চাইলেন মমতা।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘ওরা আধার কার্ড বাতিল করার চক্রান্ত করেছিল। সেই চক্রান্ত আমরা রুখে দিলাম। এটাই বাংলা!’’ বস্তুত, আধার কার্ড নিয়ে বিজেপির ‘গড়’ হয়ে ওঠা মতুয়া মহল্লাতেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। যা বিজেপির মধ্যেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। অনেকের মতে, সেই কারণে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরদের রাতারাতি ময়দানে নামতে হয়েছিল। শান্তনু ক্ষমাও চেয়েছিলেন। সাংবাদিক বৈঠক করে বনগাঁর সাংসদ তথা মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য শান্তনু বলেছিলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’
আধার কার্ড বাতিল নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষের কাছে চিঠি পৌঁছেছে। গত কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন মমতা। যাঁদের কাছে ওই চিঠি এসেছে, তাঁদের অভিযোগ শোনার জন্য নতুন পোর্টালও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নবান্ন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘যাঁদের আধার বাতিল হয়েছে, তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। ব্যাঙ্ক বা অন্য কাজে কারও সমস্যা হবে না।’’
গত বেশ কিছুদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বহু মানুষের কাছে বার্তা আসতে থাকে, তাঁদের আধার কার্ড বাতিল বলে। তার পরে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা। পাশাপাশি, কার্ড বাতিলের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতার অভিযোগ ছিল, আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিধি না মেনেই অনেকের আধার কার্ড বাতিল করছে। যাঁদের মধ্যে তফশিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষ রয়েছেন। মানুষের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানো এবং তাঁদের নানা পরিষেবা থেকে ‘বঞ্চিত’ করাই এর লক্ষ্য কি না, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তা-ও জানতে চেয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার মমতা বলেন, ‘‘ওরা এই ভাবে এনআরসি করার পরিকল্পনা করেছে। ডিটেনশন ক্যাম্প করার পরিকল্পনাও করেছে। কিন্তু আমরা কারও ক্ষতি হতে দেব না। আমরা এখানে এনআরসি রুখব!’’