Uttarpara Water Project

চলতি বছরে ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার আশা

সম্প্রতি রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায় উঠে এসেছে প্রতিটি বাড়িতে জল পৌঁছনোর প্রকল্প, ‘জল জীবন মিশনে’ এ রাজ্যের স্থান একেবারে পিছনে। জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী ভি সোমান্না জানান, জলের বিষয়টি রাজ্যের অধীন। এখনও পর্যন্ত গ্রামবাংলার ৫০.৯৭ শতাংশ পরিবার নলবাহিত জল পাচ্ছে। এ বিষয়ে হুগলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ১০:০৮
উত্তরপাড়া-কোতরঙের জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র

উত্তরপাড়া-কোতরঙের জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র

সাতটি পুরসভা এবং ছ’টি পঞ্চায়েতে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে উত্তরপাড়া পুরসভার কোতরঙে প্রায় ২২ একর জমির উপরে ১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্যের মধ্যে অন্যতম একটি বড় জলপ্রকল্প তৈরির কাজ হাতে নেয় রাজ্য সরকার। গঙ্গার জল তুলে পরিস্রুত করে পুর ও পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের সমস্যা মেটানোই ছিল উদ্দেশ্য।

Advertisement

২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু মাঝে করোনো, তারপরে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হয়। বর্তমানে ওই কাজের যা অগ্রগতি, তাতে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতিটি পুর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ শেষ হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট পুরপ্রধানেরা। যদিও কোতরঙে গঙ্গা থেকে জল তুলে তা পরিস্রুত করার ওই প্রকল্পের মূল কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে।

উত্তরপাড়া থেকে ডানকুনি হয়ে চাঁপদানি— মোট সাতটি পুরসভা এবং কোন্নগরের কানাইপুর, নবগ্রাম সহ ছ’টি পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ওই জলপ্রকল্প বিস্তৃত। পুরসভাগুলির মধ্যে উত্তরপাড়া পুরসভার কাজের অগ্রগতি সব থেকে ভাল। এই পুর এলাকার ২৪টি ওয়ার্ডেই মাটির নীচে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘বর্তমানে বাড়ি বাড়ি জলসংযোগের জন্য ফেরুল বসানোর কাজ চলছে। আমরা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিকে মডেল হিসেবে চিহ্নিত করে অগস্ট মাসের ১০ তারিখ থেকে ২৪ ঘণ্টাই জল সরবরাহ করব।’’

উত্তরপাড়া পুরসভার লাগোয়া কোন্নগরের ২০টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ জায়গায় মাটির নীচের পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় কাজ চলছে। পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, ‘‘পাইপ নিয়ে একটি ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে সমস্যার কারণেই কাজ দেরি হল।’’

উত্তরপাড়ার লাগোয়া পঞ্চায়েত রঘুনাথপুর। সেখানকার প্রধান কেষ্ট মণ্ডল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকায় মাটির নীচের জলের পাইপ বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন বাড়ি বাড়ি ফেরুল লাগানোর কাজ চলছে।’’

রঘুনাথপুর পঞ্চায়েত লাগোয়া ডানকুনি পুরসভা। সেখাকার উপ পুরপ্রধান প্রকাশ রাহা জানালেন, পুর এলাকায় মাটির নীচের পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই পুরসভার মাঝ দিয়ে জাতীয় সড়ক গিয়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় সড়কের নীচে পাইপ বসানোর কাজ বাকি।

শ্রীরামপুর পুরসভার ২৯টি ওর্য়াডে মাটির নীচের পাইপ বসানোর কাজ শেষ করতে আরও মাস দু’য়েক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের জন্যই কাজে দেরি হল। কোতরং থেকে জল পুরোমাত্রায় এলে পুর এলাকার ৪২টি ডিপ টিউবওয়েল পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’

দীর্ঘ দিন ধরেই পরিবেশবিদেরা জানিয়ে আসছেন, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকে লাগামছাড়া আবাসন তৈরি হয়েছে। সেই সব আবাসনে জল সরবরাহের জন্য পুরসভাগুলি একের পর এক ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েছে। তার জেরে মাটির নীচের জলের সঞ্চয় ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতেই নির্দিষ্ট সমীক্ষার পরে গঙ্গার জল পরিস্রুত করে পানীয় হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সেই সিদ্ধান্তেরই ফলে কোতরঙের জল প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বৈদ্যবাটি পুরসভার ২৩টি ওর্য়াড। পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো জানান, মাটির নীচের পাইপ বসানোর কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি বাড়ি ফেরুল বসানোর কাজও ৪০ শতাংশ শেষ। সব মিলিয়ে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।

সব মিলিয়ে পুরসভাগুলির কাজের যা অগ্রগতি, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা মনে করছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই সার্বিক ভাবে কাজ শেষ করা যাবে।

এখন দেখার বাস্তবে তা কতটা
কী হয়। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement