পড়ুয়াকে ধরে আনছেন শিক্ষক। বাগনানে। নিজস্ব চিত্র।
পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে হাওড়া গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক স্কুলগুলি। ইতিমধ্যেই এই কারণে জেলার ১৯ টি প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই পাড়া ঘুরে পড়ুয়া খুঁজছেন বহু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা।
হাওড়া জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলায় মোট ২০৫৯ টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। কোনও কোনও স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে ছাত্রসংখ্যা ৪০ এর নীচে । শিক্ষকেরা নিদিষ্ট সময়ে স্কুলে আসেন। পড়ুয়া না থাকায় বসে থাকতে হয় তাঁদের। আবার কোথাও পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে আনতে হয় শিক্ষকদের। কয়েক বছরের মধ্যে পড়ুয়ার অভাবে প্রায় ১৯ টি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক স্কুল পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে। যেখানে পড়ুয়া কম, সেই স্কুল থেকে শিক্ষক তুলে নিয়ে যেখানে বেশি পড়ুয়া রয়েছে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।
বাগনান পশ্চিম সার্কেলের ধোড়ামান্না প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা ৩৩। শিক্ষকরা জানান, প্রতিদিন এই সংখ্যা পূরণ হয় না। স্কুলের টিচার ইনচার্জ অরূপ দাস বলেন, ‘‘ঝাঁ চকচকে দোতলা ভবন আছে। মিড ডে মিল এর ব্যবস্থা আছে, সরকারি স্কুলের নানা সুযোগ সুবিধা আছে। তবুও পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে চায় না।তাই শিক্ষকদের ওদের ডাকতে যেতে হয়।’’
একই অবস্থা উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বাণীবন সার্কেলের বাণীবন জঙ্গলবিলাস প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতীনকুমার মণ্ডল জানান, ২০২৩ সালে স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তখন পড়ুয়ার সংখ্যা খাতা কলমে ছিল ১৮। অথচ স্কুলে আসত অর্ধেকেরও কম পড়ুয়া।
কেন কমছে পড়ুয়া সংখ্যা?
এলাকার বাসিন্দারের একাংশের ক্ষোভ, ‘‘সরকারি স্কুলে আগের মতো পড়াশোনা হয় না।’’ তাই তাঁদের ভরসা বেসরকারি স্কুল।
এক শিক্ষক অবশ্য জানান, যে সমস্ত জায়গায় হাই স্কুলের সঙ্গে প্রাথমিক স্কুল আছে, সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ভাল। কারণ অভিভাবকরা মনে করেন, প্রাথমিক স্কুলের পর ওই হাই স্কুলে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করে দেওয়া যাবে। আবার যেখানে প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে, সেখানেও পড়ুয়া সংখ্যা ভাল।
হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারি স্কুলে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, সরকারি স্কুলের উপরেই
ভরসা রাখতে।’’