ফুরফুরা শরিফে আইএসএফ সমর্থকদের উল্লাস। — নিজস্ব চিত্র।
দিল্লি যাত্রা ঠেকাতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তা নিয়ে শনিবার হাই কোর্টে জারি আইনি টানাপড়েন। এই আবহেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। শনিবার সেই খবর হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরা শরিফে পৌঁছতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন আইএসএফ কর্মী-সমর্থকরা। তাঁরা রাস্তায় নেমে যাত্রীদের বিলি করেন নকুলদানা। ঘটনাচক্রে গুড়-বাতাসার মতো যে ক্ষুদ্র মিষ্টান্ন দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন সম্প্রতি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া এই অনুব্রতই।
৪২ দিন বন্দি থাকার পরে শনিবার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন নওশাদ। জেল থেকে বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীর গ্রেফতারির বিরোধিতা করেছেন ভাঙড়ের বিধায়ক। জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরা শরিফে নওশাদের মুক্তির খবর পৌঁছতেই উচ্ছ্বাসের ছবি দেখা যায় আইএসএফ সমর্থকদের মধ্যে। তাঁরা রাস্তায় নেমে পড়েন নওশাদের ছবি নিয়ে। মেতে ওঠেন আবির খেলায়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের থামিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেন নকুলদানা। আইএসএফের হুগলি জেলার যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল দিল্লি যাচ্ছেন। আর নওশাদ সিদ্দিকি ঘরে ফিরছেন। সেই আনন্দে আমরা নকুলদানা খাওয়াচ্ছি মানুষকে। অন্যায় ভাবে ওঁকে ৪০ দিন জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। এর জবাব তৃণমূল সাগরদিঘিতে পেয়েছে। আগামিদিনে পঞ্চায়েত ভোটেও পাবে।’’
আইএসএফের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা যুব সভানেত্রী রুনা খাতুন বলেন, ‘‘বিজেপির দোসর হয়ে উঠছে আইএসএফ। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছেন ওঁরা। নওশাদ সিদ্দিকি দুষ্কর্ম করার জন্য জেল খেটেছেন। এখন তৃণমূলকে নকল করে, তাকে ছোট দেখানোর জন্য কোনও উদাহরণ টেনে লাভ হবে না।’’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘নকুলদানা’ মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন অনুব্রত। এ নিয়ে তাঁকে শোকজ়ও করে নির্বাচন কমিশন। যদিও সেই সময় অনুব্রত পাল্টা জানান, নকুলদানা সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, ‘‘নকুলদানা আসলে প্রসাদে লাগে। তিরুপতি, অজমের শরিফ, পাথর চাপুড়ি, বৈষ্ণোদেবী, বিশ্বনাথ, তারাপীঠ— সব মন্দিরেই প্রসাদে নকুলদানা থাকে। এ বার থেকে নকুলদানা সম্পর্কে যখন বলব, তখন যাতে ভুল ব্যাখ্যা যাতে না হয়, খেয়াল রাখব। প্রসাদের নকুলদানার কথাই যে বলছি, সেটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলব।’’ বর্তমানে গরু পাচারকাণ্ডে আসানসোল সংশোধনাগারে বন্দি অনুব্রত। তাঁকে দিল্লি নিয়ে যেতে তৎপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শনিবার আইএসএফ সমর্থকরা যখন জামিনে নওশাদের মুক্তিতে নকুলদানা বিলি করতে ব্যস্ত তখন সেই অনুব্রত দিল্লিযাত্রা ঠেকাতে দ্বারস্থ হয়েছেন হাই কোর্টের।