Christmas Carnival at Howrah

কার্নিভাল ঘিরে মন্ত্রীর সামনেই হাতাহাতি, ‘হেনস্থা’ পুর প্রশাসককে

ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে চাকলা যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল বন্ধ করা নিয়ে শিবপুরের বিধায়কের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৬
মমতার নির্দেশে অরূপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় মঞ্চে উপস্থিত বিধায়ক

মমতার নির্দেশে অরূপ বিশ্বাসের মধ্যস্থতায় মঞ্চে উপস্থিত বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি ও পৌরসভার চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী ছবি দীপঙ্কর মজুমদার

নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হাওড়ার বড়দিনের কার্নিভাল অবিলম্বে আবার চালু করার জন্য রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দিয়ে বৃহস্পতিবার হাওড়ায় পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো এ দিন হাওড়ার ষষ্ঠী-নারায়ণ ইকো পার্কে আসেন অরূপ। কিন্তু অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ঢোকার মুখে তাঁর সামনেই প্রথমে তীব্র বাদানুবাদ, পরে তুমুল হাতাহাতি বাধল হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীর অনুগামী এবং রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তথা শিবপুর কেন্দ্রের বিধায়ক মনোজ তিওয়ারির সঙ্গীদের মধ্যে। অভিযোগ, পুর প্রশাসককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

পরে অবশ্য অরূপের মধ্যস্থতাতেই সাময়িক ভাবে বিরোধ মেটে। ক্রীড়ামন্ত্রী জানিয়ে দেন, যে বিষয়কে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত, সেই পার্কিংয়ের দিকটি পুলিশ দেখবে। এর পরে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও পুর চেয়ারপার্সনকে মঞ্চে বসিয়ে মন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘‘বহু মানুষের রোজগার জড়িত থাকে এই ধরনের অনুষ্ঠান ঘিরে। যে হেতু বুধবার মাঝপথে কার্নিভাল বন্ধ করা হয়েছিল, তাই ২ জানুয়ারির পরিবর্তে তা শেষ হবে ৩ জানুয়ারি।’’

উল্লেখ্য, কার্নিভালে বেআইনি ভাবে পার্কিং ফি আদায় করা হচ্ছে, এই অভিযোগ ঘিরে বুধবার ধুন্ধুমার বেধেছিল। পুর চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত সহকারী সৌরভ দত্ত বিষয়টি মিটমাট করতে এলে তাঁকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে মনোজের ৪০-৫০ জন সঙ্গীর বিরুদ্ধে। পরে পুর চেয়ারপার্সন সাংবাদিক বৈঠক করতে গেলে বিধায়কের অনুগামীরা সেখানে জোর করে ঢুকে বৈঠক ভেস্তে দেন। এর পরেই নিরাপত্তার কারণে কার্নিভাল বন্ধ করে দেন পুর চেয়ারপার্সন।

গোটা ঘটনার কথা পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে। এ দিন ডুমুরজলা হেলিপ্যাড থেকে চাকলা যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল বন্ধ করা নিয়ে শিবপুরের বিধায়কের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা আমি সমর্থন করি না। এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। পুর প্রশাসক নিজের মতো আইন মেনে কাজ করবেন। কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নির্দেশ দিয়েছেন সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে কার্নিভাল আবার শুরু করার জন্য। এই নির্দেশের পরেই কার্নিভাল-স্থলে বিশাল বাহিনী ও র‍্যাফ নিয়ে পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা।

দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ সেখানে আসেন ক্রীড়ামন্ত্রী। তার আগেই এসে গিয়েছিলেন পুর চেয়ারপার্সন-সহ পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যেরা। একই সঙ্গে প্রচুর অনুগামী নিয়ে হাজির হন বিধায়কও। অভিযোগ, অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার পরেই প্রথমে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে এক প্রস্ত বাদানুবাদ হয় বিধায়কের।

ক্রীড়ামন্ত্রী আসার পরে তাঁকে স্বাগত জানানোর সময়ে চেয়ারপার্সনকে মনোজ ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সুজয়ের উদ্দেশে তাঁকে এ-ও বলতে শোনা যায়, ‘‘তুমি কি নিজেকে বড় নেতা ভাবছ নাকি?’’

অভিযোগ, বিধায়কের অনুগামীরা পুর চেয়ারপার্সনকে টানাহেঁচড়া ও গালিগালাজ করেন। কোনও রকমে তাঁকে উদ্ধার করেন পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের উপ-চেয়ারপার্সন দেবাংশু দাস ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার সময়ে প্রথমে পুলিশ চুপ করে থাকলেও জেলাশাসক পি দীপপ প্রিয়া ও নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠী ঘটনাস্থলে আসার পরে তারা তৎপর হয়ে ওঠে।

ঘটনার কিছু পরে বিধায়ক ও পুর চেয়ারপার্সনকে নিয়ে কার্নিভাল কমিটির অফিসে বৈঠকে বসেন অরূপ। পরে দু’জনকে নিয়ে মঞ্চে উঠে পরস্পরকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা দিতে বলেন তিনি। অরূপ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘তৃণমূল একটা পরিবারের মতো। যে কোনওপরিবারেই গোলমাল হয়ে থাকে। বুধবার রাতে তেমনই একটা হয়েছিল।এখন সব অতীত। আশা করব, এখন সবাই হাতে হাত মিলিয়েএই কার্নিভালকে সফল করে তুলবেন।’’ বিধায়ক মনোজওতাঁর বক্তৃতায় কার্নিভালকে স্বাগত জানান এবং সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

আরও পড়ুন
Advertisement