অবৈধ লটারির কারবার হাওড়ায়। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাস্তার পাশে একটি ছোট দরমা ঘেরা টালির চালের ঘর। দরজার বাইরে ঝুলছে প্লাস্টিকের ত্রিপল। ভিতরে কী হচ্ছে, তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু ত্রিপল সরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই দেখা যাবে, জানলাহীন ঘরের ভিতরে জ্বলছে একটি টিউবলাইট। কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি একটি টেবিল। তার উপরে প্লাস্টিকের ক্রেটের উপরে রয়েছে ২৪ ইঞ্চির কম্পিউটার মনিটর। নীচে একটি প্রিন্টার। একটি মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত মনিটরে ভাসছে নানা রঙের তাসের ছবি। রুইতন, ইস্কাবন, হরতনের জোকার, রানি, রাজা। সামনে বসে কম্পিউটার চালাচ্ছেন এক যুবক।
অস্থায়ী, ভাঙাচোরা দরমা ঘেরা এমন সব ঘরই বতর্মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কারণ ওই ঘরগুলি থেকেই চলছে নিষিদ্ধ অনলাইন লটারি। পুজোর মরসুমকে কেন্দ্র করে এই নিষিদ্ধ লটারির ঠেক গজিয়ে উঠেছে হাওড়ার সাঁকরাইল, আন্দুল, আলমপুর, নাজিরগঞ্জের মতো এলাকায়। এই নিষিদ্ধ লটারির কোনওটার নাম জিতো জোকার। কোনওটার নাম কলকাতা ফটাফট বা বম্বে ঝটপট। কোনওটা খেলতে হয় ১০ টাকা দিয়ে, কোনওটা আবার ১০০ টাকার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন এক-একটি ঠেকে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকার পর্যন্ত খেলা হয়। অভিযোগ, এমনই ২০-২২টি ঠেকে এই লটারি খেলা ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হচ্ছে প্রতিদিনই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কম টাকা দিয়ে বেশি টাকা উপার্জনের নেশায় বুঁদ হয়ে গিয়েছেন আট থেকে আশি বছরের মানুষ। পকেট ভর্তি টাকা এনে কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কেউ আবার ১০-২০ টাকার লটারি খেলে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরই কেউ কেউ আবার ওই টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন মদের ঠেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই নিষিদ্ধ লটারি খেলতে যাচ্ছেন বেকার যুবক বা দৈনিক মজুরিতে খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা। লটারিতে টাকা উপার্জনের আশায় ক্রমাগত নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। লটারি খেলাকে কেন্দ্র করে অশান্তি বাড়ছে বাড়িতেও।
পুজোর সময়ে এই নিষিদ্ধ অনলাইন লটারির যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, তা মানছেন আলমপুর এলাকার তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যও। ওই নেতা বলেন, ‘‘পুলিশ এক সময়ে এই সব বন্ধ করে দিয়েছিল। পুজোর আগে ফের রমরম করে লটারি শুরু হয়েছে। আমরা পুলিশকে বার বার বলছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এই খেলা বন্ধ হচ্ছে না। লটারির নেশায় মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।’’
যে সব এলাকায় এই নিষিদ্ধ লটারির রমারমা রয়েছে, বিশেষ করে ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষা এলাকাগুলিতে, সেখানে স্থানীয় অর্থনীতিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বাণীপুর অঞ্চলের এক শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এই লটারির ঠেকগুলিতে বেশি দেখা যাচ্ছে দিনমজুর ও বেকারদের। সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন তাঁরা। ফাটকা আয় কিছু হয়ে গেলে অন্য কাজ করছেন না। ফলে কাজকর্ম, পড়াশোনা সবই এলাকায় শেষের পথে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এই ধরনের লটারি আগেই বন্ধ করা হয়েছে বলে জানি। তবে কেউ শুরু করে থাকলে ফের পুলিশি অভিযান করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’