গঙ্গাসাগরে অর্চনা গোলদার। —নিজস্ব চিত্র।
কুড়িটা বছর চলে গিয়েছে জীবন থেকে।
এ বার বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে ফিরতে চান প্যারামেডিক্যাল মহিলা কর্মী। অসুস্থ, প্রতিবন্ধী মেয়েকে বাড়িতে রেখে নিজে চিকিৎসা করেছিলেন। সুস্থ হওয়ার বদলে মৃত্যু হয় মেয়ের। পরিবারের গঞ্জনার মুখে পড়ে মানসিক বিপর্যয় ঘটে যায় সেই বধূর। তার পরে এক দিন বাংলাদেশের খুলনার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বছর কুড়ি পরে বাংলাদেশের প্যারামেডিক্যাল কর্মী অর্চনা গোলদারের খোঁজ মিলেছে গঙ্গাসাগরে। কপিল
মুনির আশ্রম চত্বরেই গত তিন-চার বছর ধরে তাঁর বসবাস। স্ত্রীকে ফিরে পেতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরে খুলনা থেকে চিঠি লিখেছেন অর্চনার স্বামী লঙ্কেশ্বর গোলদার।
পরনে লাল শাড়ি, কপালে লম্বা তিলক, মাথায় জটা। এহেন সাধিকা চেহারার মহিলাকে ইংরেজিতে কথা বলতে শুনে, ইংরেজিতে লিখতে দেখে আশ্রম চত্বরের লোকজন
একটু অবাকই হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করেও তাঁর পরিচয়, ঠিকানা জানতে পারেননি কেউ। বরং বাড়ির প্রসঙ্গ উঠলে এড়িয়ে যেতেন মহিলা। কখনও ধর্মগ্রন্থ থেকে উক্তি উদ্ধৃত করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতেন। সম্প্রতি অর্চনার খোঁজ পেয়ে গঙ্গাসাগরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্থানীয় এক দোকানি অর্চনার কথা আমাদের জানান। আমরা গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, উনি খুলনায় প্যারামেডিক্যাল কর্মী ছিলেন। ওঁর কথার উচ্চারণ শুনে আমরা বাংলাদেশের রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যদের জানাই। ওঁরা অর্চনার পরিবারকে খুঁজে বার করেছেন।’’
এই দীর্ঘ সময় কোথায় ছিলেন অর্চনা?
সব কথা মনে করতে পারেননি ওই মহিলা। তবে তাঁর স্বামী লঙ্কেশ্বরের কথা, গ্রাম সোনাডাঙা, উপ-জেলা ডুমুরিয়ার কথা বলতে পেরেছেন। তিনি হাসপাতালে চাকরি করতেন, মেয়ে ছাড়াও তাঁর এক ছেলে রয়েছে— সে সবই জানিয়েছেন অর্চনা। মেয়ের মৃত্যুর পরে পরিবারের গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন তীর্থস্থানে। কিন্তু কী ভাবে ভারতে চলে আসা, তা আর তাঁর মনে নেই। রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা জানান, অর্চনা দক্ষিণেশ্বরে বা কুম্ভমেলায় পরিচিত মুখ বলেই তাঁরা জানতে পেরেছেন। এমনকি, কপিল মুনির আশ্রম চত্বরে গত তিন-চার বছর ধরেই তিনি বসবাস করছেন বলেও জানা গিয়েছে। গঙ্গাসাগরে ১ নম্বর গলির শ্মশানেও তাঁর যাতায়াত রয়েছে।
রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যেরা জানান, কথা বলে মনে হয়েছে, অর্চনা তাঁর গ্রামে কোনও বড় পরিবারেরই মেয়ে। তাঁর বাবার নামে স্কুলের কথাও অর্চনাই জানিয়েছেন রেডিয়ো ক্লাবের লোকজনদের। এমনকি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও তিনি সজাগ। তবে অনেক কথা আবার অসংলগ্ন। যদিও রেডিয়ো ক্লাবের লোকজন ভিডিয়ো কলে তাঁর সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দিলে অর্চনা বাড়ি ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তবে কী ভাবে তাঁকে ফেরানো হবে, তা নিয়েই এখন কথা চলছে। এমনকি, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্চনাকে বাড়ি ফেরানো কতটা সহজ হবে, তা-ও ভাবিয়ে তুলেছে রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যদের।