—প্রতীকী চিত্র।
সিপিএমের ভোটে এ রাজ্যে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি বলে দাবি করে তৃণমূল। এ বার একই প্রশ্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উঁকি দিয়েছে হুগলি জেলা সিপিএমের অন্দরে। শনিবার থেকে সিঙ্গুরে শুরু হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্মেলন। সেখানে পেশ করা রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, দলের একাংশ কি বিজেপির প্রতি ‘নরম’ ও ‘দুর্বল’?
বিজেপি সম্পর্কে আত্মসমীক্ষার ডাক দিয়ে প্রতিবেদনের ১৮ নম্বর পাতায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের একটা অংশের ভিতরেও বিজেপির প্রতি নরম মনোভাব ও দুর্বলতা কাজ করছে না কি, ভেবে দেখা দরকার’।
গত বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে ‘আগে রাম, পরে বাম’ স্লোগান শোনা গিয়েছিল। তৃণমূল কটাক্ষের সুরে বলেছিল, বিজেপির সঙ্গে আতাঁত করেছে সিপিএম। সেই অভিযোগ খণ্ডন করলেও সিপিএম পরে স্বীকার করে, তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে দলের অনেকে বিজেপি শিবিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে জেলা সিপিএমের খসড়া প্রতিবেদনে বিজেপি নিয়ে আত্মবিশ্লেষণের প্রসঙ্গ থাকায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, সিপিএমের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ এখনও বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে তৃণমূলকে শায়েস্তা করার তত্ত্বে বিশ্বাসী।
সিপিএমের এক জেলা নেতার অবশ্য দাবি, ‘‘দলের এক জনও বিজেপির প্রতি নরম নন। কারণ, যাহা তৃণমূল, তাহাই বিজেপি। তৃণমূল-বিজেপি সেটিংয়ের কথা এখন আর মানুষকে বলে বোঝাতে হয় না। একের পর এক কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পরিণতি দেখে এখন তাঁরাই বলছে দিদি-মোদী সেটিং আছে।’’
জেলা তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা বরাবরই বলে আসছি রাম-বাম সেটিং আছে। সিপিএমের নথি তাকে মান্যতা দিল।’’
খসড়া প্রতিবেদনের নানা জায়গায় বিজেপিকে নিয়ে উদ্বেগও ধরা পড়েছে। মেনে নেওয়া হয়েছে, মানুষকে এখনও সঠিক ভাবে ফিরিয়ে আনা যায়নি। তাঁরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গেই থেকেছেন। সিপিএমের ভোট খুব বেশি বাড়েনি। অবশ্য প্রতিবেদনে একইসঙ্গে দাবি করা হয়েছে, ইদানীং বিজেপির প্রতি কিছুটা মোহভঙ্গ হচ্ছে। বিশেষ করে জনজাতি এলাকায়।
জেলায় বিজেপির প্রভাব কমাতে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলি নিয়ে ওই দল প্রভাবিত গরিব পাড়াগুলিতে সিপিএম কর্মীদের যাতায়াত বৃদ্ধি, মানুষের সুখ-দুঃখে পাশের থাকার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। পরিশেষে দাওয়াই, ‘মতাদর্শগত ভাবে উন্নত বাহিনী গড়ে তোলাই এই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ’।
রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতিবেদনে সামান্য ভুল আছে। একটা অংশ নয়, সিপিএমের বড় অংশ আমাদের ভোট দিচ্ছে। সিপিএম কর্মীরা তৃণমূলকে হারাতে চান। এই দেওয়াল-লিখন সিপিএম পড়তে ব্যর্থ হয়েছে।’’