Paddy Field Arambagh

একদিনের বৃষ্টিতে খেতে জল, স্বস্তিতে ধানচাষিরা

বর্ষায় মূলত আমন ধানের চাষের দিকে তাকিয়ে থাকেন এই জেলার চাষিরা। কারণ, সেচ, সার ও শ্রমিক কম লাগে।

Advertisement
পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৬
ধানজমিতে দাঁড়িয়েছে জল। গোঘাটের কাঁঠালি পচাখালিতে।

ধানজমিতে দাঁড়িয়েছে জল। গোঘাটের কাঁঠালি পচাখালিতে। নিজস্ব চিত্র।

বর্ষার মরসুম। কিন্তু এ বারেও এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিতে ঘাটতি রয়েছে হুগলিতে। জেলার ধানচাষিরা এতদিন সেচ দিয়ে আমন ধানের বীজতলা বাঁচিয়ে রাখছিলেন। চারা রোপণের সময় হয়ে গেলেও জমি তৈরি করতে (চষে কাদা করা) পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার রাতভর বৃষ্টি তাঁদের স্বস্তি দিল। খেতে জল জমেছে। ফলে, ফের ক’দিন বৃষ্টি না হলেও চারা রোপণে সমস্যা হবে না বলে তাঁরা মনে করছেন। হাসি ফুটেছে পাটচাষিদের মুখেও। কারণ, তাঁরাও সহজে পাট পচাতে পারবেন।

Advertisement

বর্ষায় মূলত আমন ধানের চাষের দিকে তাকিয়ে থাকেন এই জেলার চাষিরা। কারণ, সেচ, সার ও শ্রমিক কম লাগে। তা ছাড়া, রোগ-পোকার আক্রমণ কম থাকায় বোরো ধানের তুলনায় খরচ হয় প্রায় অর্ধেক। সর্বোপরি, সারা বছর নিজেদের ব্যবহারের জন্য বংশানুক্রমে চাষিদের এই ধানই পছন্দ। গ্রীষ্মের বোরো ধান বিক্রি করে চাষিরা বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন।

জুলাই মাসের প্রথম বা মাঝামাঝি থেকে আমন ধান রোপণের সময়। গত বছর অনাবৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমন চাষ দেরিতে হয়। চাষিদের খরচও হয়েছিল বেশি। এ বার গত বছরের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।

চাষিরা মনে করছেন, এই বৃষ্টি তাঁদের কাছে ‘আশীর্বাদ’। গোঘাটের কুমারগঞ্জের চাষি চঞ্চল রায়, পুরশুড়ার কেলেপাড়ার বাপ্পাদিত্য ধোলে, তারকেশ্বরের নছিপুরের সুজন কুন্ডু প্রমুখ জানান, গত বছর জুন-জুলাই মাসে জলের অভাবে সময়ে আমন চাষের জমি তৈরি করা যায়নি। জমি চাষ করতে বাধ্য হয়েই ব্যক্তি-মালিকানাধীন সেচে বিঘাপিছু ১২০০ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। উপরন্তু চাষ দেরিতে হওয়ায় ফলন ভাল হয়নি। একই জমিতে ধান তুলে আলু চাষেও অনেক দেরি হওয়ায় লোকসান হয়। এ বার পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হলেও সেচের খরচ হয়তো বাড়বে, কিন্তু জেলার মূল অর্থকরী ফসল আলু চাষে দেরি হবে না।

পাটচাষিদের মধ্যে খানাকুলের অরুন্ডার নিরঞ্জন ধক বলেন, “পাট কাটার কাজ চলছে। পাট পচিয়ে তা কাচার জল নিয়ে সংশয় ছিল। এ বার কাটল।’’ পুরশুড়ার মির্জাপুরের আনাজ চাষি শচীন সামন্ত বলেন, “টানা তাপপ্রবাহে আনাজ গাছের ফুল-ফল কম হচ্ছিল। এ বার ভাল হবে। তবে খেত ডুবে থাকলে কিছু বেগুন, ঢেঁড়স এবং মাচার কিছু ফসলের গোড়া পচে নষ্ট হতে পারে।”

আনাজের ক্ষেত্রেও এই বৃষ্টি খুব উপযোগী বলে জানিয়েছেন জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক শুভদীপ নাথ। হুগলিতে বর্ষাকালীন আনাজ চাষের এলাকা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার হেক্টর বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

শুক্রবার সকালের বৃষ্টি পাশের জেলা হাওড়ার ধানচাষিদেরও একই রকম স্বস্তি দিয়েছে। বিশেষ করে ধান রোয়ার ক্ষেত্রে। তবে, এর পরে আবার বৃষ্টির অভাব হলে সেচের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন ডোমজুড়ের চাষি অষ্ট সাঁতরা। ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ, পার্বতীপুর, নারনা, উত্তর ঝাঁপড়দহ প্রভৃতি পঞ্চায়েতগুলি কৃষিপ্রধান। এখানে ধান চাষের পাশাপাশি আনাজ চাষও হয়।

জেলার এক কৃষি আধিকারিক বলেন, "শুক্রবার সকালের বৃষ্টি চাষের ক্ষেত্রে লাভজনক হয়েছে। আরও কয়েক দিন লাগাতার বৃষ্টি হলে আমন ধান চাষে খুব সুবিধা হবে। এমনিতেই এখন খাল-বিলে জল প্রায় নেই।
তার ফলে সেচের জলের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে।’’

তথ্য সহায়তা: অরিন্দম বসু

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement