Bishnu Mal Murder Case

খুনের পর সাইকেলে করে কাটা মুন্ডু লোপাট! বিষ্ণু খুনে সাত জনকে ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিষ্ণু মালকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিলেন বিশাল দাস এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। তাঁদের ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪
Chunchura court sentenced eight people to death in connection with the murder of Bishnu Mal

চুঁচুড়া আদালতে প্রবেশের সময় বিশাল দাস। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমঘটিত কারণে প্রথমে খুন। তার পর মৃতের হাত-পা এবং মুন্ডু কেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এ দিক-সে দিক। ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল শরীর থেকে হাত-পা, মুন্ডু কাটার সেই দৃশ্যও। তদন্তে নেমে মৃতের কাটা হাত-পা কয়েক দিনের মধ্যে খুঁজে বার করতে পারলেও মুন্ডু খুঁজে বার করতে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছিল পুলিশের। সাড়া ফেলে দেওয়া হুগলির সেই বিষ্ণু মাল হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া আট জনের মধ্যে সাত জনকে ফাঁসির সাজা দিল চুঁচুড়া আদালত। এক জনের সাত বছরের কারাদণ্ড।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছরের লড়াই। বিষ্ণু একটা মেয়েকে ভালবাসত। সেই কারণে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়। মুরগি কাটার চপার দিয়ে টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ওই বীভৎস ঘটনা বিরলতম। আদালত আজ সাত জনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। এক জনের সাত বছরের জেল হয়েছে। এই মামলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

২০২০ সালের ১১ অক্টোবর চুঁচুড়ার বিষ্ণুকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশাল এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা। অভিযোগ উঠেছিল, সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেন বিশাল। এর পর দেহ ছয় টুকরো করে শেওড়াফুলি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এক যুবতীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিশাল। যুবতী তাতে সাড়া দেননি। সেই যুবতীর সঙ্গেই বিষ্ণুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সে কথা জানার পরেই আক্রোশবশত বিষ্ণুকে খুন করেছিলেন বিশাল। এর পরেই তদন্তে নেমে একে একে বিশালের শাগরেদদের গ্রেফতার করা শুরু করে পুলিশ। পুলিশি জেরায় তাঁরাই সন্ধান দিয়েছিলেন, কোথায় কোথায় বিষ্ণুর দেহাংশ ফেলা হয়েছিল। সেই মতো হাত-পা, ধড় উদ্ধার হলেও কাটা মুন্ডুর হদিস মেলেনি। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছিলেন, বিষ্ণুকে খুনের পর তাঁর কাটা মুন্ডু নিয়ে রাতভর বসেছিলেন বিশাল। তার পর সকাল হলে মুন্ডুটি নিয়ে একটি সাইকেলে বেরিয়ে যান। দিন কুড়ি পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় কয়েক জনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছিলেন বিশাল। জীবনতলা থানার পুলিশই পরে তাঁকে চন্দননগর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাঁকে জেরা করেই বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু মিলেছিল। সেটি উদ্ধার হয়েছিল বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে, প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায়।

ওই মামলায় গত সোমবার মূল অভিযুক্ত বিশাল দাস এবং তাঁর সাত সঙ্গী— রামকৃষ্ণ মণ্ডল, রথীন সিংহ, রাজকুমার প্রামাণিক, রতন ব্যাপারি, বিনোদ দাস, বিপ্লব বিশ্বাস, মান্তু ঘোষ এবং শেখ মিন্টুকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক শিবশঙ্কর ঘোষ। মান্তুকে সাত বছরের কারাবাসের সাজা দিয়েছেন বিচারক। বাকিদের ফাঁসির সাজা হয়েছে।

বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। গ্রেফতার হওয়ার পর বিশাল এবং তাঁর শাগরেদদের যত বার আদালতে হাজির করানো হয়েছিল, তত বার আদালতের সামনে তাঁদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বৃহস্পতিবারও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে পোস্টার হাতে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। শেষ পর্যন্ত দোষীদের ফাঁসির সাজা হওয়ায় খুশি বিষ্ণুর পরিবার। আদালত চত্বরে কেঁদেও ফেলেন মৃতের মা, বাবা এবং বোন।

আরও পড়ুন
Advertisement