Boat Capsized

‘মাঝনদীতে পৌঁছতেই হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে’! রূপনারায়ণে নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ চার

ঘাট ছেড়ে নৌকা একটু এগোতেই কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলেন মহাদেব কর্মকার। অন্ধকারে ভাল করে দেখা না গেলেও, নৌকায় যে জল ঢুকছে সেটা অনুমান করতে পেরেছিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৭
রূপনারায়ণ নদীতে তল্লাশি।

রূপনারায়ণ নদীতে তল্লাশি। নিজস্ব চিত্র।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। অন্ধকারও। ভাড়া করা নৌকায় এক এক করে সকলে উঠে পড়ছিলেন। পিকনিকের হুল্লোরের রেশ তখন সকলের মধ্যে। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরেই যে জীবন-মরণ অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারেননি কেউই। তবে ঘাট ছেড়ে নৌকা একটু এগোতেই কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলেন মহাদেব কর্মকার। অন্ধকারে ভাল করে দেখা না গেলেও নৌকায় যে জল ঢুকছে সেটা অনুমান করতে পেরেছিলেন তিনি। তার পরই মাঝিকে বলেছিলেন নৌকা যেন ঘাটে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

Advertisement

হাওড়ার লিলুয়া থানার অন্তর্গত বেলগাছিয়া থেকে কয়েকটি পরিবার পিকনিক করতে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রূপনারায়ণ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ চার জন। ১৪ জনের মধ্যে পাঁচ জন নিখোঁজ ছিলেন। তবে শুক্রবার সকালে সুনন্দা ঘোষ নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। এক শিশু-সহ চার জন নিখোঁজ। ওই নৌকারই যাত্রী ছিলেন মহাদেব। তাঁর পরিবারের ছ’জনও পিকনিকে গিয়েছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে সকলেই বেঁচে ফিরেছেন। তাঁদের সঙ্গে ছোট ছোট দুই নাতিও ছিল। কিন্তু বেঁচে ফিরেও যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না মহাদেবরা। কারণ তাঁদেরই চার সঙ্গী এখনও নিখোঁজ। এক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে।

মহাদেব বলেন, “গাড়ি ভাড়া করে ১৪ জন মিলে বাগনানের বাকসি গিয়েছিলাম। সেখান থেকে একটি নৌকা ভাড়া করি। রূপনারায়ণ নদী পেরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের দুধকামরা ঘাটের কাছে ত্রিবেণী পার্কের কাছে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম।” কিন্তু ফেরার পথেই দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। মহাদেবের কথায়, “ভাড়া করা ওই নৌকাতেই সন্ধ্যার দিকে বাগনানের উদ্দেশে রওনা দিই। কিন্তু নৌকাটি দুধকামরা ঘাট ছেড়ে একটু এগোতেই বুঝতে পারি তাতে জল ঢুকছে। মাঝিকে বিষয়টি জানিয়ে নৌকা ঘুরিয়ে আবার দুধকামরা ঘাটেই নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু মাঝি তা শুনতে চাননি।” সেই অবস্থাতেই ১৪ জনকে নিয়ে মাঝনদীতে পৌঁছয় নৌকাটি। আচমকাই সেটি উল্টে গিয়ে মাঝখান থেকে ভেঙে যায়। নদীর জলে ছিটকে পড়েন মহিলা, শিশু-সহ সকলেই।

নদীতে পড়েই সবাই তখন বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। মহাদেব বলেন, “বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছিলাম। আমার আশপাশে তখন হাবুডুবু খাচ্ছে বাকিরা। আমার দুই নাতিকে জাপটে ধরেছিল স্ত্রী। চোখের সামনে এক এক করে কয়েক জনকে তলিয়ে যেতে দেখলাম অসহায়ের মতো।” সেই আর্ত চিৎকার শুনে কিছুটা দূরে থাকা একটি যাত্রীবাহী নৌকা দ্রুত এগিয়ে আসে। ন’জনকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পাঁচ জন তলিয়ে যান। উদ্ধার হওয়া ন’জনের মধ্যে মহাদবের পরিবারেরই ছয় সদস্য রয়েছেন।

শুক্রবার সকালে যে মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে তিনি প্রাক্তন সেনা অমর ঘোষের স্ত্রী। তাঁর দেহ উদ্ধার হলেও অমরের খোঁজ মেলেনি। মহাদেব, অমরদের একটি দল রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁরা নানা জায়গায় ঘুরতে যান। এ বারও পিকনিক করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দই যে বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে, ভাবতে পারেননি।

আরও পড়ুন
Advertisement