কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল ছবি।
গত দু’বছর ধরে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে থাকায় প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘কেন এত দিন টাকা আটকে রাখা হচ্ছে? দু’পক্ষ সমাধান না করায় আসল উপভোক্তার বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ রাজ্যের যুক্তি, ওই টাকা দিতে বাধ্য কেন্দ্র। এ নিয়ে তারা আরও বক্তব্য জানাতে চায়। মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি।
১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত নভেম্বরে প্রথম মামলা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, রাজ্যে ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। ভুয়ো জব কার্ড দেওয়া হয়েছে। অসত্য তথ্য দিয়ে জব কার্ড করানো হয়েছে। ব্যাঙ্ক আকাউন্টের অপব্যবহার, মৃত ব্যক্তির নামে জব কার্ড করানোর মতো ঘটনা হয়েছে। মাস কয়েক আগে হাই কোর্টে মামলা করে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজদুর সমিতি। তারা অভিযোগ করে, কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থ দিচ্ছে না, তার ফলে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরাও টাকা পাচ্ছেন না। কেন টাকা পাবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
এই মামলার শুনানিতে সোমবার রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। গত মার্চে আদালত বলার পরেও কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। এই টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যায়। তার পরেও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বঞ্চনা করা হচ্ছে। গত বছর অনিয়ম খুঁজতে আসে কেন্দ্রীয় দল। অথচ তার আগে থেকেই টাকা আটকে রাখা হয়েছে। রাজ্যের যুক্তির পাল্টা কেন্দ্রের আইনজীবীর সওয়াল, রাজ্যকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ তার কোনও যথাযথ হিসাব নেই। প্রচুর ভুয়ো জব কার্ড করা হয়েছে। এই অবস্থায় হিসাব ছাড়া টাকা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অসুবিধা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সংগঠনের করা এই মামলায় তাদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সওয়াল, ভুয়ো জব কার্ড খুঁজে বার করতে হবে সরকারকে। কিন্তু আসল জব কার্ড রয়েছে যাঁদের, তাঁরা কেন ভুক্তভোগী হবেন? তাঁদের আটকে থাকা টাকা ছেড়ে দেওয়া হোক। এর পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আসল জব কার্ড খুঁজে বার করা দরকার। ভাল আপেলের সঙ্গে পচা আপেল থাকলে তা চিহ্নিত করার প্রয়োজন রয়েছে। আবার এর জন্য দীর্ঘ দিন টাকা আটকে রাখাও উচিত নয়। দু’পক্ষকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।’’