উত্তপ্ত আবহেই সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছিল শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনে বেনজির ঘটনা ঘটল। সম্মেলনে দলাদলিতে জেলা কমিটির প্যানেল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য-সহ আরও অনেকে, যা সিপিএমের ইতিহাসে নজিরবিহীন। জেলা স্তরের সম্মেলনে ভোটাভুটি হওয়া নতুন কোনও ঘটনা নয়। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভোট না-হলেও অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটল। কার্যত কমিটির দখল নিল শমীক লাহিড়ীর বাহিনী। সেই কমিটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেন সুজন চক্রবর্তীর লোকেরা।
শুক্রবার থেকে বিষ্ণুপুরের আমতলায় শুরু হয়েছিল সিপিএমের জেলা সম্মেলন। শুরু থেকেই সম্মেলন ছিল তপ্ত। প্রতিনিধিদের অনেকেই বলাবলি করছিলেন, নেতাদের যা দলাদলি তাতে ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিন্তু ভোট হল না। যা হল, তাতে কার্যত সিপিএমের ইতিহাস বইতে নতুন পাতা যোগ করল তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় কেন্দ্রের খাসতালুক (বিষ্ণুপুরের আমতলাতেই অভিষেকের সাংসদ অফিস)।
উত্তপ্ত আবহেই সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছিল শুক্রবার। তার পর প্রতিনিধিদের আলোচনাতেই পরিস্থিতি ক্রমশ আরও তেতে উঠছিল। শনিবার বিদায়ী কমিটির সম্পাদক রতন বাগচী নতুন কমিটির প্রস্তাব দিতেই শুরু হয় উত্তেজনা। একটি সূত্রের দাবি, সম্মেলন চলাকালীন দলের মধ্যেই দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের হাতাহাতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কল্লোল মজুমদার, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যেরা তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
সিপিএম সূত্রে খবর, বিদায়ী সম্পাদক রতন বাগচী ৬৫ জনের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে ১৬ জন নাম প্রত্যাহার করে নেন। সেই তালিকায় রয়েছেন একদা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ নেত্রী চন্দনা ঘোষ দস্তিদার। এমনকি, সুজন চক্রবর্তীর 'ঘনিষ্ঠ' বলে সিপিএমের অন্দরে পরিচিত রাহুল ঘোষ, যিনি রাজ্য কমিটির সদস্য, তিনি জেলা কমিটির প্যানেল থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়াও অপূর্ব প্রামাণিক, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের নাম প্যানেলে না-থাকায় ক্ষোভ ছড়ায় সম্মেলনের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটির জন্য পাল্টা নাম না-পড়লেও সম্মেলনে উপস্থিত ৮৭ জন প্রতিনিধি বিদায়ী কমিটির প্যানেলের বিরোধিতা করেছেন বলে খবর।
শেষ পর্যন্ত আবার সম্পাদক হয়েছেন রতন বাগচী। সমীকরণ বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা রইল শমীক লাহিড়ীর দখলে। সুজন চক্রবর্তীর বাহিনী নাম প্রত্যাহার করে প্রতিবাদ জানান দিতে চাইলেও দুই নেতার দলাদলির পর প্রতিনিধিদের মধ্যে তরুণ অংশের অনেকের মধ্যেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।