পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। —প্রতীকী চিত্র।
হাটে ভোরবেলায় বেচাকেনা ভালই হয়। তাই হাটে যাওয়ার জন্য রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ছ’জন পোশাক ব্যবসায়ী। একটি ছোট মালবাহী গাড়িতে পোশাকের বস্তা চাপিয়ে সেগুলির উপরে বসেই রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। নিবেদিতা সেতু পার করেই ঘটে বিপত্তি। গাড়ির চাকা ফেটে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারাতেই ওই ছ’জন সেতুর উপর থেকে প্রায় ২০ ফুট নীচে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। তাতে মৃত্যু হয় চার জনের। অন্য দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার রাত তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বালিতে। পুলিশ জানাচ্ছে, মৃতেরা হলেন মহম্মদ কবীর আটা (২৪), তাঁর বাবা কাইয়ুম আটা (৫৪), অলীল মণ্ডল (৪২) ও প্রশান্ত পাল (৪৭)। কবীর, কাইয়ুম ও অলীলের বাড়ি অশোকনগরের হিজলিয়ায়। প্রশান্তের বাড়ি অশোকনগরের মহাপ্রভু কলোনিতে। অন্য দিকে, গুরুতর জখম অবস্থায় বছর আটাশের রাকেশ সাহা হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং বছর পঁচিশের শিবম সাহা আর জি করে চিকিৎসাধীন। ছ’জনকেই প্রথমে পুলিশ উদ্ধার করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকিদের স্থানান্তরিত করা হয় অন্যত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছ’জন ব্যবসায়ী মহিলা ও শিশুদের পোশাক তৈরি করে বিভিন্ন হাটে গিয়ে দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন। প্রতি শুক্রবার তাঁরা অঙ্কুরহাটিতে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের হাটে আসতেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার রাতে ছোট মালবাহী গাড়িতে জামাকাপড়ের বস্তা চাপিয়ে অঙ্কুরহাটির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, নিবেদিতা সেতু পেরিয়ে টোল প্লাজ়ার দিকে যাওয়ার রাস্তায় আচমকা বালির পঞ্চাননতলা রোডের কাছে লালবাড়ি আন্ডারপাসের আগেই ঘটে দুর্ঘটনা। মালবাহী ছোট গাড়িটির সামনের চাকা ফেটে যেতেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রাস্তায় উল্টে যায়। আর পোশাক ভর্তি বস্তার উপরে বসা ওই ব্যবসায়ীরা সেতুর রেলিং টপকে ছিটকে পড়েন নীচের রাস্তায়। বিকট আওয়াজ শুনে কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা বাইরে এসে ছ’জনকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বালি থানা ও ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশকর্মীরা এসে সকলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ওই ব্যবসায়ীদের আত্মীয়-প্রতিবেশীরা উত্তরপাড়া হাসপাতালে পৌঁছন।
জানা গিয়েছে, কাইয়ুম ও তাঁর ছেলে কবীর একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। অশোকনগরের বিভিন্ন জায়গায় কারিগরদের দিয়ে পোশাক তৈরি করিয়ে পাইকারি বাজারে বিক্রি করতেন তাঁরা। তাই তাঁদের উপরে নির্ভরশীল ছিল কয়েকশো পরিবার। ১১ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল কবীরের। তাঁর এক আত্মীয় নুরুল আলম আটা বলেন ‘‘পরিবারে রোজগেরে আর কেউ থাকল না।’’ কাইয়ুমদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই অলীলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পড়শিদের ভিড়। তাঁর স্ত্রী মমতাজ এবং পনেরো ও আট বছরের দুই ছেলে এবং বৃদ্ধা মা বুঝে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে সংসার চলবে।
সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছে অলীলের পরিবার। তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে এবং বৃদ্ধা মাকে ঘিরে রয়েছেন পড়শিরা। মমতাজ বলেন, ‘‘ভোরে হাটে পৌঁছতে রাতেই বেরোতেন। হাটে পৌঁছনো পর্যন্ত ফোনে কথা হত। তার পরে ঘুমোতে যেতাম। কিন্তু গত কাল কিছু ক্ষণ কথার পরে আর ফোনে পাইনি। তখনই মনে কু ডাকছিল।’’ অন্য দিকে, মহাপ্রভু কলোনির প্রশান্ত পালের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ১৫ বছরের ছেলে ও দশ বছরের মেয়ে। বাড়িতে পোশাক সেলাই করিয়ে তার পরে পাইকারি দরে হাটে বিক্রি করতেন প্রশান্ত। তাই বেশ কিছু পরিবারের রুজি-রোজগার চলত তাঁকে নির্ভর করে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে প্রশান্তের বাড়ির সামনেও প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজনেরা ভিড় করেছিলেন।