Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: ভিড় শুরু রাস্তা থেকে মেট্রোয়, মাস্কহীন হুল্লোড়ে কলকাতায় শুরু করোনা আরাধনা

শনিবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৭৭৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১২ জন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ০৭:০৭
n ভিড়ের মধ্যে মাস্ক খুলেই নিজস্বীতে ব্যস্ত অনেকে। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো মণ্ডপে।

n ভিড়ের মধ্যে মাস্ক খুলেই নিজস্বীতে ব্যস্ত অনেকে। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার এক পুজো মণ্ডপে। নিজস্ব চিত্র

অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তাকেই আরও জোরালো করে তুলছে পুজোর ভিড়। পঞ্জিকা মেনে পুজো শুরু হয়নি। কিন্তু রাস্তায় মানুষ দলে-দলে বেরিয়ে পড়েছেন। সেই ভিড়, মাস্কবিহীন আমোদ, হুল্লোড়ের ছবি দেখে প্রমাদ গুনছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, শহরের বেশির ভাগ মানুষই টিকার দু’টি ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন। তাই কোভিড হলেও মৃদু উপসর্গ তাঁরা উপেক্ষা করছেন। কিন্তু পুজোর ভিড়ে তাঁদের সঙ্গে মফস্‌সল থেকে আসা লোকজনের সংমিশ্রণ হলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, ওই এলাকাগুলিতে এখনও অনেকে টিকা পাননি। তাই পুজোর পরে মফস্সলে কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলছেন, “কালীপুজোর সময় ঝাঁকে-ঝাঁকে শ্যামাপোকা আলোর উপরে গিয়ে পড়ে এবং মরে যায়। এ বার পুজোর মণ্ডপ ও আলোর দিকে ছুটে যাওয়া মানুষকে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরাও সংক্রমণের আগুনে আত্মাহুতি দিতে ছুটছেন।” শনিবার রাতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৭৭৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১২ জন। চিকিৎসকদের মতে, গত কয়েক দিন ধরেই দৈনিক সংক্রমণ সাতশোর ঘরে রয়েছে। পুজোর পরে সংক্রমণের এই রেখচিত্রকতটা ঊর্ধ্বমুখী হয়, তা ভেবেই আশঙ্কিত চিকিৎসকেরা।

Advertisement

চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’-র তরফে অভীক ঘোষ, শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক দাস, স্বর্ণপালী মাইতি, অনির্বাণ দলুই-সহ ৪০ জন চিকিৎসক কোভিড বিধি পালন দেখতে শুক্র ও শনিবার শহরের ১০০টি মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও বাইরের ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পুজোর উদ্যোক্তা ও প্রশাসনের তরফে সদুত্তর মেলেনি। টিকার শংসাপত্র যাচাই করার পরিকাঠামোও নেই বলে অধিকাংশ পুজো কমিটি জানিয়েছে। ওই চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, মণ্ডপের বাইরে ঠেলাঠেলি করা দর্শনার্থীদের মাস্ক পরার জন্য প্রচারও তেমন ভাবে নেই। প্রায় সর্বত্রই দর্শনার্থীরা মাস্ক খুলেই বেপরোয়া ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “মণ্ডপের বাইরেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরার মতো সচেতনতার প্রচারে পুজোর উদ্যোক্তারা স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের মাধ্যমে ব্যবস্থা রাখবেন, এটাই আশা করছি। কিন্তু অনেক জায়গাতেই এই বিষয়ে খামতি চোখে পড়ছে। এটা দ্রুত সংশোধন করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনকে কঠোরও হতে হবে।” তবে উত্তর শহরতলিতে রাজ্যের ওই মন্ত্রীর পুজোতেই যে বেপরোয়া ভিড় চোখে পড়ছে, তাতে প্রশাসনের কঠোর মনোভাব নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। পরিদর্শনকারী চিকিৎসকেরা জানান, পুজোর ঠিক আগে নির্দেশিকা জারি না-করে অন্তত এক মাস আগে সরকার তা জানালে সুবিধা হত।

প্রসঙ্গত, রাজ্যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নির্বাচনী প্রচারে ভিড় দেখে একই রকমের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা। ভোটের পরে সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। সেই বিপদ থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় পরিকাঠামো তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এই হারে ভিড় হলে সেই পরিকাঠামো দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে কি? এক স্বাস্থ্যকর্তার আক্ষেপ, “মানুষ তো কিছুতেই বিপদের বার্তা বুঝছেন না! হাজারো সতর্কবার্তার পরেও ভিড়ে মাস্ক পরা লোকের সংখ্যা হাতে গুনে বলা যাবে। এই গা-ছাড়া মনোভাবই বড় বিপদে ফেলবে।” সমাজমাধ্যমেও যেমন ভিড়ের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘করোনাশূন্য বাংলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু করোনার ডেল্টা প্রজাতির।’

আরও পড়ুন
Advertisement