দীপাবলিতে শেয়ারে লগ্নিকারীদের জন্য সুখবর। দিনভর বন্ধ থাকলেও এক ঘণ্টার জন্য লেনদেনের সুযোগ পাবেন তাঁরা। প্রথা মেনে বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ‘মুহূর্ত’ ট্রেডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চলতি বছরে উত্তর ভারতে দু’দিন ধরে পালিত হচ্ছে দীপাবলি। এই অবস্থায় কোন দিন মুহূর্ত ট্রেডিং হবে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কিন্তু, বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের তরফে ১ নভেম্বরকে বিশেষ লেনদেনের দিন হিসাবে ঠিক করা হয়েছে। সেই মতো বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে দু’টি শেয়ার বাজার।
দীপাবলির দিনে মূলত উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে লক্ষ্মী আবাহনের প্রথা রয়েছে। ফলে এই দিনে ঘরে ঘরে ধনদেবীর আরাধনায় মেনে ওঠেন তাঁরা। ধনতেরসে যেমন সোনা কেনার চল রয়েছে, তেমনই এ দিন লক্ষ্মীলাভের জন্য অনেকে স্টক কিনতে চান। দীপাবলির দিনে শেয়ার দুনিয়ায় প্রথম বার পা রাখার প্রবণতাও রয়েছে।
সেই কথা মাথায় রেখেই মুহূর্ত ট্রেডিং চালু করেছে বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ। ১৯৫৭ সাল থেকে যা চলে আসছে। এ বারও তার কোনও ব্যতিক্রম হবে না। এই দিন থেকে শুরু হয় আর্থিক ক্যালেন্ডার। যার নাম ‘সম্বৎ’। এ বার ১ নভেম্বরের থেকে সম্বৎ ২০৮১ শুরু হচ্ছে। যার সূচনায় যে শেয়ার লেনদেন করা হয় তাকেই বলে মুহূর্ত ট্রেডিং।
বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বার সন্ধ্যা ৬টা শুরু হবে মুহূর্ত ট্রেডিং। চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। লেনদেনের মডিফিকেশন শেষ হবে ৭টা ১০ মিনিটে। আর প্রি ওপেনিং সেশন বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাখা হয়েছে।
বাজার খোলার পর কখন কোন ধরনের স্টক কেনাবেচা করা যাবে, তা-ও বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়েছে। প্রথম দিনে ব্লক ডিলের সুযোগ পাবেন বিনিয়োগকারীরা। যাতে পাঁচ লক্ষ টাকা বা তার বেশি লগ্নি করতে পারবেন তাঁরা। পরের দিন খুচরো বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে।
শেয়ার বাজারের এই মুহূর্ত ট্রেডিং প্রতীকী। তাই প্রায় প্রতি বছর এই লেনদেনের দিনে বাজার চড়তে দেখা গিয়েছে। ২০২৩ সালে মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে সেনসেক্স এবং নিফটি যথাক্রমে ৩৫৪ এবং ১০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল।
তথ্য বলছে, শেষ ১৮টি মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের মধ্যে ১৩টিতে ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে শেয়ার বাজার। এর মধ্যে ২০০৮ সালে সর্বাধিক বেড়েছিল সেনসেক্স। ওই বছর বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে ৫.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। সমান তালে ছুটতে দেখা গিয়েছিল নিফটিকেও।
শেষ তিন বছরের মধ্যে ২০২২ সালে মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে শেয়ার বাজারে ছিল রকেটগতি। ওই দিন ০.৮৮ শতাংশ বেড়েছিল সেনসেক্স। তবে সাধারণত এই দিনে স্টকের লেনদেনের পরিমাণ কম থাকে। শুধু মাত্র কয়েকটি শেয়ারে অল্প সময়ের জন্য উল্লেখ্যযোগ্য গতিবিধি দেখা যায়।
আগে মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে শেয়ার বাজারে ভিড় জমাতেন লগ্নিকারীরা। বম্বে বা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে গিয়ে শেয়ার কিনতেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমানে সেই পদ্ধতিতে মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে করা হয় না লেনদেন।
স্টকে বিনিয়োগ করতে হলে অনলাইনে ‘ডিম্যাট’ অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এই অ্যাকাউন্ট থাকলে যে কেউ ঘরে বসেই শেয়ারে লগ্নি করতে পারেন। মুহূর্তের সময়েও ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীদের করতে হবে লেনদেন।
তবে মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের জন্য ১ নভেম্বর ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুললে, শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ মিলবে না। কারণ, এই অ্যাকাউন্ট চালু হতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। ফলে দিনের দিন এর মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ নেই।
মুহূর্ত ট্রেডিং কতটা লাভজনক, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কারণ, অনেকেই প্রতীকী হিসাবে এ দিন লগ্নি করেন। ফলে মুহূর্তের দিনে বাজার উঠলেও পরের দিন সেনসেক্স বা নিফটিতে পতন দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে লোকসানের আশঙ্কা থাকে।
তবে, মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে বাজার চড়লে কেউ স্টক বিক্রি করে মোটা টাকা ঘরে তুলতে পারেন। যদিও অভিজ্ঞতা না থাকলে এক ঘণ্টার মধ্যে শেয়ার কিনে তা বিক্রি করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, এর জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল হতে পারে। তখন লোকসানের মুখে পড়তে পারেন লগ্নিকারী।
মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের দিনে শেয়ার বাজারে নতুন করে কোনও সংস্থার তালিকাভুক্তি হয় না। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হল, কোনও সংস্থার শেয়ার কেমন অবস্থায় রয়েছে তা জেনে বিশেষ এই লেনদেনের সময়ে লগ্নি করা উচিত।
চলতি বছরের অক্টোবরে লগ্নিকারীদের পকেট গরম করতে পারেনি বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ। ৩১ অক্টোবর আর্থিক ক্যালেন্ডার সম্বৎ ২০৮০-র শেষ দিনে সেনসেক্স এবং নিফটির গ্রাফ ছিল নিম্নমুখী। দু’টি বাজার নেমেছে যথাক্রমে সাড়ে ৫০০ এবং ১৩৫ পয়েন্ট। তবে এই সম্বতে মোট ২৬ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে বাজার।
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দাবি, অক্টোবরে গত চার বছরের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে শেয়ার বাজার। বছরের দশম মাসটিতে সেনসেক্স এবং নিফটি পড়ছে ছয় শতাংশের বেশি। ২০২০ সালের মার্চে কোভিড অতিমারী শুরু হওয়ার পর এত বড় পতন আর দেখা যায়নি। তবে ২০৮০-তে ছোট এবং মাঝারি সংস্থাগুলির শেয়ারে মোট ৩০ শতাংশ ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছে।
শেয়ার বাজারে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মুহূর্ত ট্রেডিংয়ের সময়েও এটা মাথায় রেখে লগ্নি করা উচিত। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া ভাল। লেনদেনে আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার অনলাইন কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নয়।
সব ছবি: সংগৃহীত।