West Bengal

WB Municipal Election 2022: ঝাড়গ্রাম এখনও জঙ্গলমহলের অবিচ্ছেদ্য অংশ, নগরের কোনও সুবিধাই নেই

কতটা পরিষেবা দিতে সক্ষম হল ঝাড়গ্রাম পুরসভা? আসন্ন পুর নির্বাচনে কোন দিকগুলোর কথা মাথায় রেখে ভোট দেবেন সাধারণ মানুষ?

Advertisement
ফটিকচাঁদ ঘোষ
ফটিকচাঁদ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:০৭
পাঁচ মাথা মোড়, ঝাড়গ্রাম।

পাঁচ মাথা মোড়, ঝাড়গ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।

এত দিন পরেও ঝাড়গ্রাম পুরসভার রাস্তাঘাটের তেমন উন্নয়ন হয়নি। অথচ রাস্তার যে পরিকল্পনা করা আছে তা অত্যন্ত সুন্দর। পুরবোর্ড কিছু রাস্তা পাকা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার মান এতই খারাপ ছিল যে, কয়েক বছরেই পিচ উঠে গিয়ে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। খানাখন্দ গর্তে ভরা এই সব রাস্তা প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তার চেয়েও খারাপ। আরও সমস্যা, রাস্তার দু’পাশে নির্মাণ সামগ্রীর সম্ভার। রাস্তা ক্রমাগত সঙ্কুচিত ও বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। গর্তে জমা জল ছোট রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। কেউ বলবে না, এগুলি একটি পুরসভার রাস্তা। আদ্যিকালের অযত্নের এই পথ শহরটিকে কদর্য করেছে। নিয়মিত রাস্তার যত্ন নেওয়া হয় না। কাঁচারাস্তার পরিমাণই অধিক। তুলনায় গলির ছোট ঢালাই রাস্তাগুলো ভাল।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা অপরিচ্ছন্নতা। রাস্তার দু’পাশে জঙ্গল। সেখানে আবর্জনা জমে। ঝোপঝাড় থাকার জন্য মশা ও সাপ-পোকামাকড়ের উপদ্রব। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। গৃহস্হের ময়লা রাস্তায় জমে। পথচারীরা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলেন। ফুটপাতের দোকানদার, ফলবিক্রেতা, মাংস দোকানি, পথে ঘুরে বেড়ানো গরু-কুকুরের মলমূত্র রাস্তায় বা রস্তার দু’ধারকেই ডাস্টবিন করে তুলেছে। এর উপর রয়েছে কয়েকটি নার্সিংহোম। তাদের আবর্জনা নিতে কখনও কখনও গাড়ি আসে। কিন্তু অধিকাংশ সময় ময়লা রাস্তায় জড়ো হয়। অবস্থা এমন হয় যে, কোনও কোনও রাস্তায় হাঁটা বা পেরিয়ে যাওয়াও দুঃসহ হয়ে ওঠে। অথচ ঝাড়গ্রাম একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। এর পরিচ্ছন্নতার উপর শহরবাসী ও পর্যটকদের শরীর ও মনের স্বাস্হ্য নির্ভর করে। ‘অরণ্যসুন্দরী’ ক্রমাগত তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঝোপঝাড় জঞ্জাল ও আবর্জনার জন্য।

ঝাড়গ্রাম পুরসভায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে কিছু এলাকায়। কোনও পরিকল্পনাও নেই। বেশ ঘটা করে রাস্তা খুঁড়ে পিচ নষ্ট করে জলের পাইপ লাইন বসল। সবাই ভাবল ঘরে ঘরে জল বুঝি পৌঁছল এ বার। কিন্তু সে পরিকল্পনা অধরা থেকে গিয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় রাস্তার ধারে কল আছে। সেখানে নির্দিষ্ট সময়ে জল আসে। কোথাও জলের চূড়ান্ত অপচয় হয়। সেই জল জমে গড়িয়ে চারপাশ নোংরা করে। পানীয় জল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু তার কোনও সুবন্দোবস্ত নেই।

ঝাড়গ্রামে পাকা ড্রেন আছে সামান্যই। গোটাটাই কাঁচা নর্দমা। যেটুকু পাকা ব্যবস্হা তারও নিকাশির বহমানতা নেই। নোংরা জমে সেগুলো ভর্তি হয়ে থাকে। দুর্গতি বাড়ে বর্ষায়। চারপাশে জল জমে যায়। মেন রোড দিয়ে নদীর মতো স্রোত বইতে থাকে। বদ্ধ নর্দমা ও ড্রেনের জল উপরে উঠে আসে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ও কোনও ড্রেন নেই। মোট কথা, জল নিকাশির কোনও বন্দোবস্তই নেই। ঝাড়গ্রামের মাটির শোষণ ক্ষমতা ছিল। বৃষ্টি হলেও একটু পরে মাটি জল টেনে নিত। এখন মাটি নেই, মাঠ নেই, গাছ নেই। সমস্ত মাঠ জলা পুকুর নিচু জমি বুজিয়ে ভরাট করে বহুতল উঠছে হু হু করে। অথচ তার জল নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই। পুরনো ঝাড়গ্রামে জল বেরোবার যে পথ ছিল তা বুজিয়ে সরকারই ট্যুরিস্ট লজ বানিয়েছে। এখন ঝাড়গ্রামে বৃষ্টি মানেই আতঙ্ক। জল নোংরা সব রাস্তায় ভাসে। ঘরে ঢুকে পড়ে। অনেক বহুতল ও পুরনো বাড়িতে জল ঢুকে যায়। নিকাশি ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির একটি।

‘স্ট্রিট লাইট’ শুধু মেন রোডে আছে। ধুমধাম করে ত্রিফলা লাগানো হয়েছে সামান্য অংশে। পাড়ায় পাড়ায় ল্যাম্প পোস্ট আছে বটে। কখনও কখনও একটু আধটু আলোও জ্বলে। কিন্তু বেশির ভাগ দিন জ্বলে না। আলো খারাপ হয়ে যায়। সেখানে নতুন আলো জ্বলে না। অধিকাংশ রাস্তাঘাট অন্ধকারে ডুবে থাকে। গ্রামের চেয়েও থমথমে অন্ধকার সেখানে।

‘আরও চাই’ কথাটাই ঝাড়গ্রাম পুরসভায় একটি হাস্যকর শব্দবন্ধ। যেখানে কিছুই নেই অথবা নামমাত্র আছে সেখানে আরও চাইয়ের মানে কী? আসলে ঝাড়গ্রাম এখনও জঙ্গলমহলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই নগরের কোনও সুবিধাই নেই এখানে। রাস্তাকে পাকা ঢালাই চওড়া ও মেরামত করতে হবে। সব রাস্তাকে উন্নতমানের পাকা রাস্তায় পরিণত করতে হবে। রাস্তার দু’পাশে জঙ্গল-ঝোপঝাড় নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। নির্দিষ্ট স্হানে ময়লা ফেলার ব্যবস্হা করতে হবে। অথবা ঘর থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের নির্দিষ্ট উপায় বার করতে হবে।

প্রতিটি রাস্তার নিয়মিত দেখ ভাল এবং যথেষ্ট পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। নিকাশি ব্যবস্হার মাস্টার প্ল্যান করতে হবে।

সবচেয়ে দুঃখজনক, শহরে কোনও ভাল অডিটোরিয়াম নেই। অথচ ঝাড়গ্রাম সাংস্কৃতিক ভাবে রীতি মতো সমৃদ্ধ। গানের দল ও স্কুল নাচের দল ও স্কুল চার পাঁচটি নাটকের দল। নিয়মিত নাটক অভিনয় হয়ে থাকে। কবি সাহিত্যিকদের রীতিমতো সাহিত্যসভা আলোচনা সভা সাড়ম্বরে হয়। কিন্তু তা করতে হয় ফাঁকা মাঠে দু’টি পুরনো অপরিসর অবৈজ্ঞানিক হলে।

ঝাড়গ্রামে যেন আকর আছে রূপকার নেই। পাথর আছে ভাস্কর নেই।

ঝাড়গ্রাম সত্যি অরণ্যসুন্দরী। তাকে সবাই মিলে নষ্ট করে চলেছে। পুরসভার কি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না, তাকে পরিচ্ছন্ন সুস্থ ও সুসজ্জিত করে গড়ে তোলার? অনেক পরে হওয়া অনেক পুরসভা এর চেয়ে ঢের বেশি উন্নত ও পরিচ্ছন্ন পরিষেবা দিতে পারছে। ঝাড়গ্রাম পারবে না কেন?

আরও পড়ুন
Advertisement