Death in Police Custody

সেই নবগ্রাম থানাতে সাসপেন্ড হওয়া ওসি, আইও-র বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ মৃত বন্দির বাবার

শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার শৌচাগারের ভিতরে মেলে গোবিন্দ ঘোষ নামে এক বন্দির ঝুলন্ত দেহ। ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। শনিবার সাসপেন্ড হন ওসি এবং তদন্তকারী অফিসার (আইও)।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নবগ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৩০

—ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানায় বন্দির মৃত্যুর ঘটনায় এ বার পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হল। রবিবার নবগ্রাম থানার ওসি অমিত ভকত এবং তদন্তকারী অফিসার (আইও) শ্যামল মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন মৃত গোবিন্দ ঘোষের বাবা ষষ্ঠী ঘোষ। বৃদ্ধের দাবি, তাঁর নির্দোষ ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও আইনি কাগজ বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই গোবিন্দকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবং থানার ভিতরেই তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এর জন্য তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন সাসপেন্ড হওয়া ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়েরও করেছে পুলিশ। লালবাগের এসডিপিও জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে।

Advertisement

সপ্তাহ খানেক আগে নবগ্রাম থানার সিঙ্গার গ্রামে প্রদীপ ঘোষ নামে কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর বাড়িতে সোনার গয়না এবং নগদ টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে নবগ্রাম সেনাছাউনিতে দিনমজুরের কাজ করা যুবক গোবিন্দের। পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রদীপ। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোবিন্দকে আটক করা হয়। পরে গ্রেফতার হন তিনি। এর পর শুক্রবার রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। পুলিশ দাবি করে, আত্মহত্যা করেছেন ওই বন্দি। কিন্তু মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দকে বেধড়ক মারধর করেন। তাঁর বুকে এবং তলপেটে লাথি মারা হয়। নির্মম অত্যাচারে প্রাণ হারান গোবিন্দ। শনিবার এ নিয়ে দিনভর উত্তেজনার পরিস্থিতি ছিল এলাকায়। থানা ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পায় পুলিশ। এর পর রাতে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর আবারও পুলিশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে পরিবার। মৃতের বাবা অভিযোগ করেন মূল অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাঁর দাবি, অভিযুক্তরা নিজেরাই পুলিশের চাকরি করেন। তাই তাঁদের ‘বাঁচানোর’ চেষ্টা করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতর। আদালতের পর্যবেক্ষণে ময়নাতদন্তের দাবির পাশাপাশি সাসপেন্ড হওয়া দুই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে তিনি খুনের অভিযোগ করবেন। এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন মৃতের বাবা। রবিবার তিনি দুই অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে লেখেন, ‘‘আমাকে কোনও আইনি কাগজপত্র না দেখিয়ে জোর করে নিরীহ ছেলেকে নবগ্রাম থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে লক-আপে রাখে পুলিশ। ৪ঠা অগস্ট বিকেল ৪টের সময়ে আমি পুলিশের মৌখিক অনুমতিতে ছেলে গোবিন্দ ঘোষের সঙ্গে লক-আপের বাহির থেকে দেখা করি। ছেলে আমাকে বলে, ‘বাবা আমাকে এখান থেকে তুমি বার করার চেষ্টা করো। নইলে ওসি এবং এসআই আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে। নবগ্রাম থানার ওসি আমাকে বাঁচতে দেবে না। থানার ওসি এবং আইও বিভিন্ন ভাবে মানসিক অত্যাচার করছে। বেল্ট দিয়ে গলা চেপে ধরছে। গলা চেপে শ্বাসরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমাকে দিয়ে অসত্য কথা বলানোর চেষ্টা করছে। আমি অসত্য কিছু বলিনি বা বলতে পারব না।’’’

মৃতের বাবার আরও অভিযোগ, তাঁকে অপমান করা হয় থানায়। ছেলেকে নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ওসি তাঁকে ‘চোরের বাবা’ বলে অসম্মান করেন এবং থানা থেকে চলে যেতে বলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফেরার পর বড় ছেলের একটি ফোন পান। তাঁর কাছ থেকে ছোট ছেলের মৃত্যুসংবাদ পান তিনি। মৃতের বাবা ওই দুই পুলিশ আধিকারিকের গ্রেফতারি দাবি করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘‘ন্যায়বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য এই অভিযোগ দায়ের করছি।’’

লালবাগের এসডিপিও বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন ধারায় তদন্ত শুরু হবে।’’ অন্য দিকে, নবগ্রাম থানার ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারের গ্রেফতারির দাবিতে সোমবার বহরমপুরে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে ডেপুটেশন দেবে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর।

রবিবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠান। সেখানেও এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে অধীর লেখেন, ‘‘নবগ্রামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে পুলিশ। পুলিশ যদি হত্যাকারী হয়ে যায়, তা হলে নিরাপত্তার জন্য কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ?’’

আরও পড়ুন
Advertisement