সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পঞ্চায়েত ভোটে পুনর্নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ সমাজমাধ্যমে ‘ভুয়ো’ পোস্টার ছড়ানোয় যারপরনাই অস্বস্তিতে সিপিএম। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের আইটি সেলও ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছে, বিষয়টি বুমেরাং হয়েছে।
অশান্তি, হিংসা, ছাপ্পা, ব্যালট পেপার খেয়ে নেওয়ার মতো নানা অভিযোগ পেয়ে পঞ্চায়েতে ৬৯৬টি বুথে পুনরায় ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ওই সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই সিপিএমের ফেসবুক ফ্রন্টের লোকজন একটি পোস্টারে ছয়লাপ করে দিয়েছিল সমাজমাধ্যম। ইনবক্সে ইনবক্সে ঘুরেছিল সেই পোস্টার। তার ফল এমনই যে, অনেকেরই মনে হতে পারে বাংলায় ভরা বামজমানা আসন্ন! বস্তুত, অনেকে ফেসবুকে লিখতে শুরু করেছিলেন ‘পুনরুত্থান’ (রেজ়ারেকশন)। কিন্তু এই তথ্য বিস্ফোরণের যুগে ‘সত্য’ চাপা থাকেনি!
সোমবার নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পুনর্নির্বাচনের ফল সংক্রান্ত যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, সেটি ‘ভুয়ো’। সিপিএমের কর্মীবাহিনী যে পোস্টার ছড়িয়েছিল তাতে ৬৯৬টি বুথের হিসাব তুলে ধরা হয়েছিল। সেই পোস্টারে পরিসংখ্যান ছিল এই রকম— বামেরা পেয়েছে ৩৮০টি আসন, কংগ্রেস ১২২টি, ৯১টি বিজেপি এবং তৃণমূল মাত্র ৬৫টি। অর্থাৎ, বামেরা আসনপ্রাপ্তির নিরিখে এক নম্বরে। চার নম্বরে শাসক তৃণমূল। তিন নম্বরে বিজেপি। কংগ্রেস দু’নম্বরে। ফলে বাম-কংগ্রেস মিলিত আসন তৃণমূল বা বিজেপির চেয়ে অনেকটাই বেশি। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ফের ভোট-হওয়া বুথগুলির ফলাফলে প্রাপ্ত আসনসংখ্যার নিরিখে বামেদের আসনসংখ্যা ৬২টি। প্রথম চারটি দলের মধ্যে তারা রয়েছে চার নম্বরে। সবার উপরে তৃণমূল। শাসকদল পেয়েছে ৪৭০টি আসন।
শুধু সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা নন। সিপিএমের সমর্থক অনেক বিশিষ্টজনও ওই পোস্টারটি পোস্ট করেছিলেন নিজেদের ফেসবুক টাইমলাইনে। পরে সত্য প্রকাশ্যে আসায় অনেকেই তড়িঘড়ি সে সব পোস্ট মুছে দেন! আবার পরিচালক অনীক দত্তের মতো কেউ কেউ ‘নির্লিপ্ততা’ দেখিয়ে তা-ও করেননি।
সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠেছে, সিপিএমের সমর্থকদের কাছে ওই ‘তথ্য’ এল কোথা থেকে? আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, বিষয়টা গোটাটাই ‘মনগড়া’ হিসাবে কেউ একজন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেটাই তার পরে ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। সিপিএমের এক নেতার আক্ষেপ, ‘‘অনেক দায়িত্বশীল লোকজনও ওই ভুয়ো তথ্যে ভেসে গিয়েছেন!’’ আবার সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা, এটি ‘মনস্তাত্বিক’ বিষয়। বহু দিন জয়ের স্বাদ না পাওয়া কর্মী-সমর্থকেরা ফেসবুকেই ‘ভার্চুয়াল’ লাল আবির মাখতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে এই ধারণাও তৈরি করতে চেয়েছিলেন যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হলে তাঁরাই এক নম্বর।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের তরফে এ নিয়ে জেলায় জেলায় ‘সোশ্যাল মিডিয়া সেল’কে সতর্কবার্তাও পাঠানো হয়েছে। তবে দলের অনেকের এমনও বক্তব্য যে, অনেক সময়েই এই ধরনের ‘গুজব’ ব্যক্তিগত ভাবে কেউ ছড়িয়ে দেন। তার কোনও সংগঠিত রূপ থাকে না। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আগের চেয়ে আমাদের ভোট বেড়েছে। এই ইতিবাচক দিকটা প্রচার করলে কাজ দিত। কিন্তু ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে মুখ পুড়ল। ভোটবৃদ্ধির ইতিবাচক দিকটাও চাপা পড়ে গেল!’’