West Bengal Panchayat Election 2023

তৃণমূলকে ফাঁসাতে দলীয় কর্মীকে দিয়ে নিজের ঘরে বোমাবাজি করান সিপিএম প্রার্থী! ফাঁস হতেই বেপাত্তা

এক ফুচকা ব্যবসায়ীকে দিয়ে নিজের বাড়িতে বোমাবাজি করিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন সিপিএম প্রার্থী দম্পতি। পুলিশের এই দাবিতে রাজনৈতিক চাপানউতোর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ২২:৪০
CPIM candidates who contested in Panchayat election are accused in a bomb blast case and conspiracy against TMC

সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনায় ধৃত সিপিএম কর্মী রাম সরকার (লাল জামা)। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলকে ‘ফাঁসানোর’ জন্য নিজেদের দলীয়কর্মীকে দিয়ে নিজের বাড়িতে বোমাবাজি করান সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি। ওই বোমাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সিপিএম কর্মীর কাছ থেকে পুলিশ সেই তথ্য পাওয়ার পরই ‘পলাতক’ পঞ্চায়েত ভোটের সিপিএমের দুই প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডল এবং দেবিকা দেবনাথ। এই ঘটনায় জেরে রাজনৈতিক চাপানউতর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের উত্তর মোহনপুর গ্রামে। অস্বস্তিতে জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। কটাক্ষ করেছে শাসকদল।

এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত মণ্ডল। তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ ছিলেন একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথের সিপিএমের প্রার্থী। দম্পতির বাড়ি জামালপুরের উত্তর মোহনপুর গ্রামে। ওই একই গ্রামে বসবাস করেন পেশায় ফুচকা বিক্রেতা রাম সরকার। পাশাপাশি তিনি সিপিএম কর্মী হিসাবে এলাকায় পরিচিত।

Advertisement

গত ২৫ জুন রাতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাড়িতে বোমা মেরেছে, এমন অভিযোগ এনে তোলপাড় ফেলে দেন ওই দম্পতি। সিপিএমের জামালপুর১-এর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র জামালপুর থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশকে সুকুমার এ-ও জানান, তাঁদের প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে মোট তিনটি বোমা ছোড়া হয়েছিল। তার মধ্যে দুটি বোমা ফাটেনি। একটি ফেটেছে। এবং এ নিয়ে ঘটনায় এক তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী এবং তাঁর সহযোগীকে নিশানা করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করে পুলিশ। তদন্তে নেমে ১৬ জুলাই ফুচকা ব্যবসায়ী রামকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত স্বীকার করেছেন যে ওই প্রার্থী দম্পতির ‘গেমপ্ল্যান’ অনুযায়ী কাজ করেছেন তিনি। রাম জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এক দিন রাতে সুশান্ত এবং দেবিকার বাড়িতে ৪-৫ জন আসেন। তাঁরা কেউ জামালপুরের বাসিন্দা নন। ওই ব্যক্তিরা সুশান্ত এবং দেবিকার বাড়িতে রাতও কাটান। তাঁরা তৃণমূলকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন রাম।

এর পর পরিকল্পনা মাফিক গত ২৪ জুলাই রাতে জামালপুরের সিপিএম পার্টি অফিসের কাছে দোলরডাঙ্গা এলাকায় ভোজের আয়োজন করেন সিপিএম প্রার্থী দম্পতি। রাতে একটি ক্রিকেট প্রতিযোগিতাও হয়। সেখানে ফুচকার স্টল সাজিয়ে বসেন রাম। পুলিশের কাছে নাকি তিনি জানিয়েছেন, সে দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সুশান্ত তাঁকে একটি প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ে তিনটি বোমা দেন। জানিয়ে দেন কী করতে হবে। এর পর রাত পৌনে ২টো নাগাদ বোমা-সহ ফুচকার গাড়ি নিয়ে চলে যান সিপিএম প্রার্থীদের বাড়ির সামনে। তাঁদের বাড়ির উঠোনে দু’জায়গায় দুটি বোমা ফেলে দেন। ওই দম্পতির বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পর একটি বোমা ছোড়েন তাঁদের বাড়িতে।

এই ঘটনায় পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করে রামকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার ধৃতকে তোলা হয় বর্ধমান আদালতে। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এবং বোমা সরবরাহকারীদের নাগাল পেতে তদন্তকারী অফিসার ধৃতকে ১০ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে নিতে চান। বিচারক তাঁদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।

এ নিয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন, ‘‘রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করানোর মতো পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্তে সিপিএম নিশ্চয়ই তলে তলে বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। তাই সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি পরিকল্পনা করে নিজেদের বাড়িতে বোমাবাজি করিয়ে তৃণমূলের নামে দোষ চাপিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।’’ অন্য দিকে, সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্র বলেন, “আদালতের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে যা শুনছি, ঘটনা যদি তাই হয়, তবে আমরা আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ অন্য দিকে ধৃত রামের স্ত্রী জয়ন্তী সরকারের অভিযোগ, “সিপিএম প্রার্থী পরিকল্পনা করে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement