Buddhadeb Bhattacharjee

শনিবারে হাসপাতালে গিয়ে আর এক শনি কাটিয়ে বুধে বাড়ি ফিরছেন বুদ্ধদেব, এ বার কেমন চিকিৎসা চলবে!

বুদ্ধদেবের জন্য নতুন বাইপ্যাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ঘরে একটি ‘কার্ডিয়াক মনিটর’ থাকবে। এর মাধ্যমে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ২১:১৫
EX CM Buddhadeb Bhattacharjee may discharge from hospital and diagnosed from house

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

এগারো দিন পরে হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সব কিছু ঠিক থাকলে বুধবারই পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ফিরবেন তিনি। তবে বাড়ি ফিরলেও বেশ কিছু বিধিনিষেধের মধ্যে থাকতে থাকতে হবে তাঁকে। চলবে চিকিৎসাও। সে কথা মাথায় রেখেই বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বুদ্ধদেবের ঘরে সেগুলি কোথায় রাখা হবে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিছানা কোথায় থাকবে, এই সব কিছুই মঙ্গলবার পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখে এসেছে হাসপাতালের একটি দল।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুদ্ধদেবের জন্য নতুন বাইপ্যাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁর যে বাইপ্যাপটি ছিল, সেটি প্রায় সাড়ে তিন বছরের পুরনো। এ ছাড়া তাঁর ঘরে একটি ‘কার্ডিয়াক মনিটর’ থাকবে। যার মাধ্যমে অক্সিজেনের মাত্রা (স্যাচুরেশন), রক্তচাপ, হৃদ্‌স্পন্দন দেখা যাবে। যাতে ঠিক ভাবে বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখা যায় এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা যায়, তাই এই ব্যবস্থা। এ ছাড়া তাঁর বাড়ি এবং সংলগ্ন এলাকা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া বাড়িতেই ফিজ়িয়োথেরাপি এবং সোয়ালো থেরাপি চলবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি যা, তা দেখেশুনে তাঁকে বুধবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসকদের।

গত ২৯ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির ১১ দিন পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অনেকটাই ভাল। চিকিৎসক এবং তাঁকে দেখতে আসা ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথাও বলছেন বুদ্ধদেব। যদিও এখনও তাঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টেই রাখা হয়েছে। আপাতত ‘রাইলস টিউবে’র সাহায্যেই তরল খাবার খাচ্ছেন তিনি। আগামিদিনে শক্ত এবং অর্ধশক্ত খাবারও মুখ দিয়ে খাওয়ানো চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য। কিন্তু তাতে প্রধান বাধা, বিষম খাওয়ার সম্ভাবনা। বুদ্ধদেব যাতে মুখ দিয়ে খাবার খেতে গিয়ে বিষম না খান, সে জন্য ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’ জারি রয়েছে। সোয়ালো থেরাপির মাধ্যমে খাবার গলাধঃকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পেশির স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা হয়। হাসপাতালের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বুদ্ধদেবকে বিছানা থেকে পা ঝুলিয়ে বসানো এবং বিছানা ধরে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তাঁকে বাড়ি ফেরানোর প্রায় সব প্রস্তুতিই সেরে রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার আবার বৈঠক বসে বুদ্ধদেবের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা। সেখানে বাড়ি ছাড়ার পর কী কী করতে হবে, মূলত তা নিয়ে আলোচনা হয়। আলিপুরের হাসপাতালের তরফ থেকে আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবা দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘হোম কেয়ার’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিচর্যা এবং দেখভালের জন্য যাঁরা যাবেন, তাঁদেরও আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ কাটিয়ে সেরে উঠলেও নতুন করে আবার সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে বুদ্ধদেবের।

সোমবার হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, বুদ্ধদেব সংক্রমণমুক্ত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীরে সংক্রমণ চিন্তায় রেখেছিল চিকিৎসকদের। রবিবারই জানা যায়, এক সময় বুদ্ধদেবের স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি থাকা সিআরপি ২০-র নীচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ, তিনি যে ক্রমে সংক্রমণমুক্ত হয়ে উঠেছেন, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তখনই। শনিবার থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করা সত্ত্বেও সিআরপি কমায় স্বস্তিবোধ করেন চিকিৎসকেরাও।

বুদ্ধদেব গুরুতর সংক্রমণ কাটিয়ে উঠলেও তা পুরোপুরি নির্মূল করতে যে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল, তা যথেষ্টই ধকলের। সেই ধকল তিনি এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। বিশ্রাম নিয়ে আগামিদিনে সেই ধকল কাটিয়ে উঠলে তিনি আরও সুস্থ হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে বুদ্ধদেবের সিটি স্ক্যানের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বুদ্ধদেবের দু’টি ফুসফুসই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। আগে থেকেই ফুসফুস দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত থাকার ফলে ‘লাং ফাইব্রোসিস’-হয়েছে তাঁর। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এটির অর্থ, ফুসফুসের টিস্যুগুলি শক্ত এবং কঠিন হয়ে যাওয়া। এই বিষয়টি চিন্তায় রেখেছিল চিকিৎসকদের।

শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ায় গত ২৯ জুলাই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বুদ্ধদেবকে। বুদ্ধদেবের সিওপিডির সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ২০২১ সালের ১৮ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিভৃতবাসে ছিলেন বুদ্ধদেব। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৫ মে তাঁকে আলিপুরের এই বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয়েছিল। ২০২১-এর ২ জুন আলিপুরের হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় বুদ্ধদেবকে। তার পর কিছু দিন সিআইটি রোডের একটি নার্সিংহোমে ছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement