Sandip Ghosh

কলকাতায় তিনটি ফ্ল্যাট ও দু’টি বাড়ি, সঙ্গে বাংলো! বহরমপুরে ফ্ল্যাট, অনুমতি ছাড়াই সম্পত্তি কেনেন সন্দীপ?

‘আপত্তিকর কাগজপত্রে’র পাশাপাশি সন্দীপ এবং তাঁর স্ত্রীর ঠিকানাগুলি থেকে ডিজিটাল নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন, ২০২২ (পিএমএলএ) অনুযায়ী ওই নথিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৮
ED reveals assets and documents seized from Sandip Ghosh in RG Kar Hospital financial irregularity case on Thursday

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই একের পর এক সম্পত্তি কেনেন আর্থিক দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা ঘোষ? সম্প্রতি ইডির হাতে সন্দীপের যে সম্পত্তির নথি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তা থেকে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

সন্দীপ ও তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতার নামে হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তির নানা নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানাল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তরফে বলা হয়েছে, ‘‘সন্দীপ ও সঙ্গীতার মালিকানাধীন মুর্শিদাবাদের একটি ফ্ল্যাট, কলকাতার তিনটি ফ্ল্যাট, দু’টি বাড়ি এবং একটি খামারবাড়িতে অভিযান চালিয়ে নথিগুলি উদ্ধার হয়েছে।’’

‘আপত্তিকর কাগজপত্রে’র পাশাপাশি সন্দীপ এবং তাঁর স্ত্রীর ঠিকানাগুলি থেকে ডিজিটাল নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন, ২০২২ (পিএমএলএ) অনুযায়ী ওই নথিগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইডির আঞ্চলিক দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, মোট সাতটি ঠিকানায় তারা হানা দিয়েছে। রাজ্য সরকারের কর্মী সন্দীপ এবং তাঁর চিকিৎসক-স্ত্রী সঙ্গীতা প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি ছাড়াই কয়েকটি স্থাবর সম্পত্তি কিনেছিলেন বলে ইডির দাবি।

সন্দীপের পাশাপাশি তাঁর ঘনিষ্ঠদের ঠিকানাতেও অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইডি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতার দুই জায়গায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছে তারা। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ টালা এলাকায় একটি বহুতল আবাসনে হানা দেন ইডির আধিকারিকেরা। জানা যায়, ওই আবাসনেরই পাঁচ তলায় থাকেন সন্দীপ ঘোষ-‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী চন্দন লৌহ। তল্লাশি অভিযান চলেছে কালিন্দীর একটি ঠিকানাতেও। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিন্দীতে তল্লাশি অভিযান চলছে মেডিক্যাল সরঞ্জাম সরবরাহকারী সংস্থা অক্টেন মেডিক্যালের অফিসে।

প্রসঙ্গত, আরজি করের চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনার পর পরই কলেজের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ ওঠে, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে। সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গত ১৬ অগস্ট রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়। এক দিন পরেই কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের পরিবর্তে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। এর পরে ওই দুর্নীতিকাণ্ডে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের খোঁজ পেতে আসরে নামে ইডি। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি দমন আইনের বিভিন্ন ধারায় সিবিআই এবং দুর্নীতি দমন বিভাগ যে এফআইআর করেছিল, তারই ভিত্তিতে তারা তদন্তে নেমেছে।

সেই মামলার সূত্র ধরেই, সন্দীপের কলকাতার ঠিকানার পাশাপাশি বহরমপুরের গোরাবাজারের ফ্ল্যাট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের একটি বাংলোয় হানা দেয় তারা। জানা যায়, ক্যানিং-২ ব্লকের ঘুটিয়ারি শরিফের নারায়ণপুর মৌজায় কয়েকশো বিঘা ফাঁকা জমিতে গড়ে ওঠা ‘সঙ্গীতাসন্দীপ ভিলা’ নামে ওই বাংলোটি সন্দীপের। চিকিৎসক মহলের একাংশের অভিযোগ, সন্দীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার পদে থাকার সময়ে, ২০২০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। যেখানে আর্থিক দুর্নীতি, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনায় অনৈতিক ভাবে টাকার লেনদেন, অনুমতি না নিয়ে দুবাই ভ্রমণ, বিভিন্ন সরবরাহকারী সংস্থার থেকে ঘুষ নিয়ে বেলেঘাটায় বাড়ি তৈরি, প্রাইভেট প্র্যাক্টিস-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ২০২০-র ৩ ফেব্রুয়ারি জনৈক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় এবং ১ অক্টোবর রঞ্জিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ওই দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।

আরও পড়ুন
Advertisement