দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। —ফাইল ছবি।
পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়িতে ইডির হানা। সকাল সাতটা নাগাদ মন্ত্রীর লেকটাউনের দু’টি বাড়িতে হানা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। মন্ত্রীর বাড়ি বাইরে থেকে ঘিরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সুজিতের বাড়ির নীচে এসে পৌঁছেছে পুলিশও।
পাশাপাশি, শুক্রবার সকালে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরও দুই জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় এবং উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুবোধ চক্রবর্তীর বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাপস বরাহনগরের তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর বৌবাজারের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি।
অন্য দিকে, সুবোধ উত্তর দমদম পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আগে উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন সুবোধ। শুক্রবার সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ বিরাটির খলিসাকোটা পল্লীতে তাঁর বাড়িতে ঢোকে ইডি আধিকারিকের দল। সুবোধের বাড়ির চার পাশেও মোতায়েন রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এর আগে পুর নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের সূত্রে সুজিতকে তলব করেছিল অন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গত বছরের ৩১ অগস্ট তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, সেই নথির সূত্রেই সুজিতের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ দমদম পুরসভার উপপ্রধান ছিলেন সুজিত। সেই সময় পুর নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছিল বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর সেই সূত্র ধরেই ইডি শুক্রবার সকালে দমকলমন্ত্রীর বাড়িতে হানা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এর আগে ইডির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সুজিত। দমকলমন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, তাঁর নাম বলিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরই প্রাক্তন আপ্তসহায়ককে চাপ দিচ্ছেন ইডি আধিকারিকেরা। পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে পুজোর আগেই দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেই প্রসঙ্গে অক্টোবর মাসে লেকটাউনের এক পথসভায় সুজিত বলেছিলেন, ‘‘নিতাই আমার আপ্তসহায়ক ছিল। প্রথম বার কাউন্সিলর হয়েছে, এখন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে। ওর বাড়িতে গিয়ে ১২ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি করেছে, কিছুই পায়নি। তার পর এখন আমার নাম বলার জন্য ওর ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু বলছে সুজিত বসুর নামটা বলে দাও, লিখে দাও, তোমাকে ছেড়ে দেব। এটা কী ধরনের অত্যাচার!’’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ নিয়োগ মামলায় অয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। ইডির তরফে দাবি করা হয়, অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে। ইডি সূত্রে এ-ও জানা যায়, জেরায় অয়ন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোট ২০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন। এর পরেই আতশকাচে আসে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি। পুর নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তের ভার সিবিআইকে দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। কিন্তু শীর্ষ আদালত রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দেয়। বহাল থাকে পুর নিয়োগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ।