সন্দেশখালির শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
দুর্নীতির কালো টাকা নানা ভাবে সাদা করতেন শাহজাহান শেখ, আগেই সে কথা জানিয়েছিল ইডি। এ বার তাদের নজরে সন্দেশখালির এই নেতার হিসাবের খাতা। যে খাতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে খোদ শাহজাহান এবং তাঁর কর্মচারী, ঘনিষ্ঠদের জেরা করে। শাহজাহানের সেই হিসাবের খাতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মিলিয়ে দিতে পারে অনেক অঙ্ক।
ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহানের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, ব্যাঙ্কের নথিতে তার হিসাব নেই। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের জমি দখল করে নিয়ে তা বিক্রি করে সেই টাকা চিংড়ির ব্যবসার মাধ্যমে সাদা করতেন শাহজাহান। ফলে সরকারি ভাবে কোনও নথিতে ‘কালো’ টাকার হিসাব ছিল না। অথচ, শাহজাহানের কন্যার নামে নামাঙ্কিত সংস্থা সাবিনা এন্টারপ্রাইজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৩৭ কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। তা হলে সেই টাকার হিসাব কোথায় রাখতেন শাহজাহান? কাকে কত টাকা দিচ্ছেন, কার কাছ থেকে কত টাকা পাচ্ছেন, কত টাকা পাওয়া বাকি, কী করে হিসাব করতেন? জেরা করে তারই উত্তর পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহান এক বা একাধিক সাদা খাতায় বিভিন্ন হিসাব লিখে রাখতেন। কখনও তিনি নিজে হিসাব লিখতেন, কখনও তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত হিসাব খাতায় লিখতেন তাঁর কর্মচারীরাই। সেই খাতা শাহজাহানের দফতরে রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তা এ বার আসতে চলেছে ইডির হাতে। ওই খাতায় লেখা হিসাব মিলিয়ে দেখতে পারেন তদন্তকারীরা। শাহজাহানের লেনদেন সংক্রান্ত যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি, ওই খাতার পাতা থেকে মিলতে পারে সব উত্তর।
ইতিমধ্যে শাহজাহানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করেছে ইডি। একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং মাছ ব্যবসা সংক্রান্ত সংস্থা ‘মেসার্স শেখ সাবিনা ফিশ সাপ্লাই ওনলি’-র একটি অ্যাকাউন্টে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
শাহজাহান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইডি হেফাজত থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআই হাসপাতালে যাওয়ার পথে শুক্রবার সকালেও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘সব মিথ্যা। ওরা বিজেপির দালাল।’’ কারা বিজেপির দালাল, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি সন্দেশখালির এই সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল নেতা। এর আগেও তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। শুক্রবার জোকার সামনে শাহজাহানকে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ। চিৎকার করে কয়েক জনকে শাহজাহানের কঠিন শাস্তির দাবি জানাতে শোনা যায়। তাঁকে তিহাড় জেলে পাঠানো, এমনকি গুলি করে দেওয়ার দাবিও জানান কেউ কেউ।