গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের ৪২ হাজার ২৮টি দুর্গাপুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দের নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য। তার পর বরাদ্দ হয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থও। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে লেখা রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের উপসচিব পর্যায়ের এক আধিকারিকের নির্দেশিকায় এ কথা জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ওই নির্দেশিকা পাঠানো হয়। ঘটনাচক্রে, দুর্গাপুজোয় অনুদান দেওয়ার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের জনস্বার্থ মামলার বৃহস্পতিবার শুনানি রয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। তার আগেই প্রকাশ্যে এল এই নির্দেশিকা ও অর্থ দফতরের নথি।
মঙ্গলবারের ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কলকাতা পুলিশের এলাকার ৩,০০০ পুজো এবং রাজ্য পুলিশের অন্তর্গত মোট ৩৫টি জেলা ও কমিশনারেট এলাকার ৩৭ হাজার ২৮টি পুজোর জন্য মোট ২৪০ কোটি ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। অর্থ দফতরে তথ্য বলছে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ওই অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে গিয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে বণ্টনের জন্য রাজ্য পুলিশকে ২২২ কোটি ১৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং কলকাতা পুলিশকে ১৮ কোটি দেওয়া হয়েছে দু’টি পৃথক ‘মেমো’র মাধ্যমে।
রাজ্যের ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অগস্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাকারীদের দাবি, যেখানে রাজ্য সরকার কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বকেয়া রয়েছে, সেখানে পুজো কমিটিকে এই অনুদান দেওয়া সমীচীন নয়। গত মঙ্গলবার ওই মামলায় হাই কোর্টে দেওয়া হলফনামায় রাজ্য জানায়, রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের কোনও মহার্ঘ ভাতা বকেয়া নেই। তাই এই মামলার গ্রহণযোগ্যতাই নেই। ঘটনাচক্রে, সে দিনই রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে দুই শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে পুজোর অনুদান পাঠানোর কথা জানিয়ে জেলা পুলিশের সুপার এবং সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের মাধ্যমে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
প্রসঙ্গত, পুজোয় অনুদান নিয়ে রাজ্য বেশ কয়েকটি যুক্তি দিয়েছে। জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকার মনে করলে জনগণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারে। এতে কোনও বাধা নেই। তার পর ইউনেসকোর তরফ থেকে দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার কথা তুলে ধরে রাজ্য জানায়, এটা শুধু রাজ্যের নয়, দেশের জন্যও গর্বের বিষয়। সরকার হলফনামায় জানিয়েছে, সংবিধানের ৫১ (এ) ধারা অনুযায়ী, হেরিটেজ রক্ষার দ্বায়িত্ব দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। সেই মোতাবেক রাজ্য সরকারের কাছে প্রত্যাশা করা হয়, তারা যেন এগুলির সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে উৎসবকে মসৃণ ভাবে পরিচালনা করার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করার জন্য নয়। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনারকে লেখা চিঠিতেও ইউনেসকোর সম্মাননাপ্রাপ্তির প্রসঙ্গ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অগস্টে রাজ্যের প্রায় ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এর আগের দু’বছর পুজো কমিটিগুলিকে রাজ্যের দেওয়া অনুদানের অঙ্ক ছিল ৫০ হাজার। এ বার মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৬০ হাজার টাকা অনুদানের পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলি বিদ্যুৎ বিলেও পাবে ছাড়। সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলে ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। তবে হাই কোর্টে জমা দেওয়া হলফনামায় জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার পুজো কমিটিগুলোকে বিদ্যুৎ বিলে কোনও ছাড় দিচ্ছে না।