Abhishek Banerjee

উনিশে ধর্ম, একুশে আলাদা রাজ্য, ‘পুরনো ভুলে’ ভোট নয় বিজেপিকে, উত্তরবঙ্গ থেকে আর্জি অভিষেকের

সভায় উপস্থিত জনতাকে অভিষেক বলেন, “ধর্ম আমি বাড়িতে করব। কিন্তু আমি ভোট দেব কাজের ভিত্তিতে।” কাজের ভিত্তিতে ভোট হলে যে তৃণমূলই জয়ী হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট দাবি করেন তিনি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০৮
Don’t mistake again, TMC leader Abhishek Banerjee warned people from BJP in Alipurduar Rally

উত্তরবঙ্গ থেকে বিজেপিকে তোপ অভিষেকের। ফাইল চিত্র।

দক্ষিণবঙ্গে একচেটিয়া সাফল্য মিললেও ২০১১ সালের পর অধিকাংশ নির্বাচনেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে উত্তরবঙ্গ। তা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে প্রকাশ্যেই শোনা গিয়েছে খেদোক্তি। বুধবার সেই আক্ষেপের সুর শোনা গেল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও।

Advertisement

দলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচিতে অভিষেক বৃহস্পতিবার গিয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামে। সেখানকারই বারোবিসা অঞ্চলে দলীয় সভা থেকে অভিষেক দাবি করেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ধর্মীয় প্রচারের কারণে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার পৃথক রাজ্যের প্রতিশ্রুতিতে মানুষ পদ্মে আস্থা রেখেছিলেন। একই সঙ্গে অভিষেক তাঁর সভায় উপস্থিত জনতাকে জানান, ‘পুরনো ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়ে শুধু উন্নয়নের মাপকাঠিতেই ভোট দেওয়া উচিত মানুষের।

অভিষেকের কথায়, “২০১৯ সালে এই লোকসভায় (আলিপুরদুয়ার) বিজেপি জিতেছিল। কারণ, আপনারা ধর্মের কারণে ভোট দিয়েছিলেন।” তার পরেই পরামর্শ দেওয়ার ভঙ্গিতে তিনি বলেন, “ধর্ম আমি বাড়িতে করব। কিন্তু আমি ভোট দেব কাজের ভিত্তিতে।” কাজের ভিত্তিতে ভোট হলে যে তৃণমূলই জয়ী হবে, সে দাবিও স্পষ্ট করে দেন তিনি। নিজেকে ‘স্পষ্ট কথা বলার লোক’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে অভিষেক গত বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করেন। ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল রাজ্য জুড়ে বিপুল সাফল্য পেলেও আলিপুরদুয়ার খালি হাতেই ফিরিয়েছিল ঘাসফুল শিবিরকে। সে কথা উল্লেখ করেই অভিষেক বলেন, “২০২১-এ জেলার পাঁচটি বিধানসভাতেই বিজেপি জিতেছিল। কারণ, আপনারা পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোট দিয়েছিলেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারকে সামনে রেখে ভোট দেননি।” বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলে অভিষেক বলেন, “ওরা পৃথক রাজ্যের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। কিন্তু লক্ষ্মীর ভান্ডার এখনও চলছে। চলবেও।”

উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের মতো ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে অভিষেক যে ভাবে প্রকাশ্য সভা থেকে সরব হয়েছেন, তা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। পৃথক রাজ্যের প্রতিশ্রুতির ‘অসারতা’ প্রমাণে অভিষেক জানিয়েছেন, যদি নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ জেলায় এসে আলাদা রাজ্যের কথা বলে যেতে পারেন, তবে তিনি আর কোনও দিন আলিপুরদুয়ার জেলায় ঢুকবেন না। বিজেপি কেবল ধর্মের নামে বিভাজন, অস্ত্রের ঝঙ্কার প্রদর্শন করতে চায় বলেও রাজ্যের বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অভিষেক।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই অভিষেকের বক্তব্যে বার বার ফিরে এসেছে গ্রামীণ আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজের প্রকল্পের কথা। বিজেপির তরফে প্রকল্পগুলিতে যে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার জবাবে অভিষেক বলেন, “এই জেলায় আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে আর আলিপুরদুয়ারে ঢুকব না।” জেলার বিজেপি জনপ্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার জন্য চিঠি লিখছেন বলেও অভিযোগ করেন অভিষেক। একশো দিনের টাকা ‘ছিনিয়ে আনতে’ আরও এক বার দিল্লিতে গিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। এ নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে বার্তা পাঠাতে দু’মাসে এক কোটি চিঠি পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার নাম না করেই অভিষেক বলেছেন, “এখান থেকে যাঁকে লোকসভায় পাঠিয়েছিলেন, তাঁর টিকি খুঁজে পাওয়া যায় না।” পঞ্চায়েতে প্রার্থী নির্বাচনের মাপকাঠি ঠিক করে দিয়ে তৃণমূলের এই শীর্ষনেতা বলেন, “এমন মানুষকেই জেতান, যিনি দিল্লির দাসত্ব করবেন না।”

আরও পড়ুন
Advertisement