Medical College Admission Case

মেডিক্যালে ভর্তি মামলা: টানাপড়েন শেষে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিবিআই তদন্ত-নির্দেশে স্থগিতাদেশই

রাজ্য চাইলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য বিষয়টিতে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৩১
Justice Abhijit Gangopadhyay

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিনভর আলোচ্য হয়ে রইল কলকাতা হাই কোর্টে। বুধবার সকালে মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল তাঁর একক বেঞ্চ। এর বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে মৌখিক স্থগিতাদেশ দেয়। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ কোনও লিখিত নির্দেশ না দেওয়ায় সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ারই নির্দেশ দেন তিনি। রাজ্য আবার যায় ডিভিশন বেঞ্চে। শেষমেশ সকালের মৌখিক নির্দেশই লিখিত ভাবে জানায় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলে, সিবিআই তদন্ত না চাওয়া সত্ত্বেও কেন সেই নির্দেশ দিল একক বেঞ্চ? ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের বক্তব্য, এতে দেশের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে।

Advertisement

ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেছিলেন ইতিশা সোরেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, তফসিলি জনজাতি না-হওয়া সত্ত্বেও অনেক পড়ুয়া ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সেই সব কলেজের তালিকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেরও নাম রয়েছে। বুধবার সেই মামলারই শুনানি ছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। বিচারপতি সরাসরিই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তাঁর মত, যদি কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে, তা-ও প্রকাশ্যে আসা দরকার। বিচারপতির এই নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)। তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘শাহজাহানকে আপনাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে? রাজ্যটা দিনে দিনে কয়েক জন দুর্নীতিগ্রস্তের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ এত কিছুর পরেও পুলিশের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। এ রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষের উপর তাই এই আদালতের কোনও আস্থা নেই। দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার তাই সিবিআইকেই দেওয়া যথাযথ মনে করছে আদালত।’’

রাজ্য চাইলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য বিষয়টিতে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এজির মুখে সবটা শুনে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেয় তারা। জানায়, যে হেতু মৌখিক ভাবে আবেদন করা হয়েছে, তাই মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে তারা। পরে বিকেলে মামলাটি আবার ওঠে একক বেঞ্চে। মামলাকারীর আইনজীবী কেয়া সূত্রধর এজলাসে যান। তিনি বিচারপতিকে জানান, রাজ্যের তরফে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে সিবিআই তদন্তের বিরুদ্ধে মৌখিক আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি পাল্টা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ আছে? তা হলে সেটা আমাকে দেখান। না হলে বিচারকক্ষের লাইভ স্ট্রিমিং দেখান।’’

ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের কোনও কপি একক বেঞ্চে দেখাতে পারেননি দু’পক্ষের আইনজীবীরা। এর পরেই বিচারপতি বলেন, ‘‘ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের কোনও প্রমাণ নেই। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ বা মামলার কপি যদি না থাকে, তা হলে কি সেটা গ্রহণযোগ্য?’’ এর পরেই সিবিআইকে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সেই নির্দেশটি ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনে রাজ্য। পরে ডিভিশন বেঞ্চ লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয়, মেডিক্যালে ভর্তির মামলায় সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি বিচারপতি সৌমেন সেন ও উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ লিখিত ভাবে জানিয়েছে, যদি এজির বক্তব্যকে সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে মামলাকারী নিজে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাননি। সে ক্ষেত্রে রাজ্যেরই নিরপেক্ষ তদন্ত করার কথা। তাতে হস্তক্ষেপ করা হলে ভেঙে পড়তে পারে দেশের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। মামলাটি পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির এই মামলাটি গত বছর থেকেই চলছে বিচারপতির এজলাসে। চিকিৎসক হওয়ার প্রশিক্ষণে অযোগ্যেরা গুরুত্ব পেয়েছেন জেনে আদালতেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারী আদালতে যে ৫০ জনের নাম জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে বলেন বিচারপতি। গত ১৬ অক্টোবর ওই ৫০ জনকে মামলায় যুক্ত করারও নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি, রাজ্যের স্ক্রুটিনি কমিটিকে বলেছিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই খতিয়ে দেখার কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন বিচারপতি। গত ১৪ ডিসেম্বরে রাজ্য জানায়, এমন ১৪ জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করেছিলেন। বিচারপতি দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে তদন্ত শুরু করতেও বলেছিলেন বিচারপতি। বুধবার সেই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন