Mamata Banerjee-Junior Doctors Meeting

নবান্নে সদিচ্ছার বৈঠকে মতানৈক্যে ‘ত্র্যহস্পর্শ’, তিন বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে ভিন্ন মত মমতার

নবান্নের বৈঠকে ১০ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা চলাকালীন মূলত তিন বিষয়ে মতানৈক্য হয় দু’পক্ষের। যার জেরে কখনও কখনও ‘গরম’ হয়েছে ১২৮ মিনিটের ওই বৈঠক। তবে কখনওই তা মাত্রা ছাড়ায়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৪
Disagreement on three issues in meeting between Mamata Banerjee and junior doctors

(বাঁ দিকে) নবান্ন সভাঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।

অচলাবস্থা কাটানোর সচিচ্ছা দু’পক্ষেরই রয়েছে। সেই সূত্রেই সোমবার নবান্ন সভাঘরে বৈঠকের আয়োজন। এক পক্ষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। অন্য পক্ষ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের ১০ দফা দাবি নিয়েই মূলত আলোচনা হল নবান্নের বৈঠকে। সেই আলোচনা চলাকালীন মূলত তিন বিষয়ে মতানৈক্য হয় দু’পক্ষের। যার জেরে কখনও কখনও ‘গরম’ হয়েছে ১২৮ মিনিটের ওই বৈঠক। তবে সেই উত্তাপ কখনওই মাত্রা ছাড়ায়নি। কখনও মুখ্যমন্ত্রী নিজে খানিক নমনীয় হয়ে সভাঘরের পরিবেশ ঠান্ডা করেছেন। কখনও আবার জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের সুর নরম করেছেন।

Advertisement

মূলত যে তিন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা গেল নবান্নের বৈঠকে, তা হল— এক) আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৭ জনের সাসপেনশন, দুই) স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ এবং তিন) প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে টাস্ক ফোর্স গঠন। এর মধ্যে গত শনিবার ধর্মতলার অনশনমঞ্চে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ সম্ভব নয়। বৈঠকেও তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। টাস্ক ফোর্স নিয়ে আলোচনার সময় সেই কমিটিতে কত জন থাকবেন, মূলত তা নিয়েই মতভেদ ছিল। এই দু’টি বিষয়ই আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার মধ্যে ছিল। অন্য দিকে, ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে আলোচনার সময়ে আরজি করে ৪৭ জনের সাসপেনশনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।

আরজি করে সাসপেনশন

আরজি করে কেন একসঙ্গে ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, বৈঠকে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, কেন তাঁর সরকারকে ওই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানো হয়নি? মমতা বলেন, ‘‘অভিযোগ ন্যায্য হলে ঠিক আছে, কিন্তু আমরা কারও পড়াশোনা শেষ করতে চাই না। কেন নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা থ্রেট কালচার নয় ? এ বার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কমিটি দেখবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই নিজেদের মতামত তুলে ধরেন আরজি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘আরজি করের ছাত্র হিসাবে বলতে চাই, আরজি করের যে ৫৯ জন বা ৫১ জন, যাঁদের কথাই বলুন না কেন ম্যাম, এর মধ্যে যাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে, আমরা তদন্ত কমিটি তৈরি করেই যা করার করেছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘সেটা তোমরা নিজেরা করতে পারো না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ভাই, প্রিন্সিপ্যাল আমায় জানাননি। কলেজ কাউন্সিলের কথা আমাকে বলো না। এ সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না। কলেজ কাউন্সিল কে তৈরি করে? কী সিস্টেম?’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, ‘‘সরকার বলে একটা পদার্থ আছে। আপনি মানুন আর না মানুন। সিস্টেম বলে একটা জিনিস আছে। এখন থেকে সিস্টেমটা বুঝুন। আপনারা নিজেরা তদন্ত করে নিলেন...যাকে পছন্দ হল হল...যাকে হল তো হল না।’’

স্বাস্থ্যসচিবকে অপসারণ

গত শনিবার অনশনমঞ্চে ফোনালাপের সময় স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ নিয়ে তাঁর সরকারের অবস্থান মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেওয়ার পরেও ফের সেই বিষয়টি ওঠে নবান্নের বৈঠকে। হাওড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অগ্নিবীণ কুণ্ডু বিষয়টি উত্থাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ভাবছিলাম তোমাদের কথা আগে শুনে পরে আমার বক্তব্য রাখব। কিন্তু একটা মানুষকে অভিযুক্ত প্রমাণ করার আগে তাঁকে অভিযুক্ত বলা যায় না। আমি একদমই লিগ্যাল পয়েন্ট থেকে বলছি। অভিযোগ করতেই পারো। কিন্তু আদৌ সে অভিযুক্ত কি না সেটা কিন্তু কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’’ পাল্টা অগ্নিবীণ বলেন, ‘‘আমরা কাগজপত্র এনেছি কেন অভিযোগ করা হচ্ছে তা নিয়ে।’’ মমতার জবাব, ‘‘তুমি আনতেই পারো। কিন্তু আমাকেও দেখতে হবে সেগুলি আদৌ কতটা ঠিক।’’ এর প্রেক্ষিতেই এক মহিলা জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাঁকে আমরা অভিযুক্ত বলব। যদি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তখন তাঁকে দোষী বলব। সুতরাং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাঁকে অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা ব্যাকরণগত এবং আইনত ভাবে ভুল বলে আমাদের মনে হয় না।’’ যদিও মমতার দাবি, ‘‘এ ভাবে অভিযুক্ত বলা যায় না।’’

টাস্ক ফোর্স গঠন

বৈঠকে টাস্ক ফোর্স গঠনের বিষয়টি উত্থাপন করেন জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার। তিনি বলেন, ‘‘একটা যেমন স্টেট টাস্ক ফোর্স হচ্ছে, আমরা বলছি প্রত্যেকটা কলেজ লেভেলে এ রকম মনিটরিং কমিটিও হোক। যেটা কলেজ লেভেল টাস্ক ফোর্স হবে। সেখানে যেমন অধ্যক্ষ থাকছেন, সুপার থাকছেন, বিভাগীয় প্রধানেরা থাকছেন, সিস্টার-দিদিদের প্রতিনিধি থাকছেন। রোগীর পরিজন থাকতে পারেন। ঠিক তেমনি, জুনিয়র ডাক্তার এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিদের রাখা জরুরি।’’ উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা নিশ্চয়ই এটা কনসিডার করতে পারি । আমার মনে হয় না, এটি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে।’’ তখন জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়, ‘‘এখানে যাঁরা থাকবেন, যাতে আবার সিলেক্টিভ হয়ে না যায়। যত ক্ষণ না ইলেকশন হচ্ছে, ইলেকশন হয়ে গেলে তো তখন আবার ইলেক্টেড মেম্বার আসবে। তত ক্ষণ অবধি মেজরিটি অফ ইউজি স্টুডেন্টস এবং মেজরিটি অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স তাঁরা নিজেদের প্রতিনিধিকে বেছে এখানে পাঠাবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, ‘‘আমি কী করে করব এটা? এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে তোমরা আছ, তাতে এখন তোমরা যা বলবে, সিনিয়র ডাক্তারেরা তাই করবেন। আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দাও। তার পরে আমরা তাঁদের সাজেশন চাইব। অধ্যক্ষ সেটা রেকমেন্ড করে আমাদের পাঠাবে।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়, ‘‘এ রকম একটা কমিটি তৈরি হচ্ছে কলেজে কলেজে, সেটা নিয়ে একটা ডিরেক্টিভ চাইছি। স্টেট টাস্ক ফোর্স একটা তৈরি হচ্ছে। সেখানে এ রকম প্রতিনিধি থাকছেন।’’ শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি বলছি শোনো, স্টেট টাস্ক ফোর্সে ডিজিকে রেখেছ, সিপিকে নিয়ে নাও। গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল থেকে একজনকে নিয়ে নাও। পাঁচ জন হয়ে গেল। ওদের পক্ষ থেকে দু’জন জুনিয়র ডাক্তার ও দু’জন রেসিডেন্সিয়াল ডাক্তার নিয়ে নাও। মেয়েদের স্টুডেন্টদের থেকে একজনকে নিয়ে নাও। ১০ জন হয়ে গেল।’’

আরও পড়ুন
Advertisement