Dilip-Suvendu

‘মর্নিং ওয়াক’ বিতর্কের পর প্রথম পাশাপাশি বসলেন দিলীপ, শুভেন্দু, সঙ্গে সুকান্তও

ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই শুভেন্দুর সঙ্গে এক মঞ্চে যোগ দেওয়ার আগে তাঁদের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে মুখ খুলছেন দিলীপ। বলেছেন, একই দলে একই আদর্শ নিয়ে কাজ করলেও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হতেই পারে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:১৬
পাশাপাশি বসে দিলীপ এবং শুভেন্দু। নিজস্ব ছবি।

পাশাপাশি বসে দিলীপ এবং শুভেন্দু। নিজস্ব ছবি।

একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগাদাগি লেগেই রয়েছে। প্রকাশ্যেই চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। এই ‘বিরোধ’-এর আবহেই ব্যান্ডেলের দলীয় বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখোমুখি হলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলীয় মঞ্চে পাশাপাশি বসতে দেখা গেল দুই নেতাকে। মাঝে শুভেন্দু। এক পাশে দিলীপ। অন্য পাশে, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

ঘটনাচক্রে, শুক্রবার বেলার দিকে শুভেন্দুর সঙ্গে এক মঞ্চে যোগ দেওয়ার আগে তাঁদের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ নিয়ে মুখ খুলছেন দিলীপ। ‘বিরোধ’-এর কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সাফাই, একই দলে একই আদর্শ নিয়ে কাজ করলেও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হতেই পারে। তার মানে তো নিজেদের মধ্যে ‘মারামারি’ করা যায় না! তার আগে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে প্রাতর্ভ্রমণ-বিতর্ক নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ। বলেছেন, ‘‘কোনও বিরোধ নেই। মান-অভিমানও নেই। তবে মর্নিং ওয়াকে দম লাগে।’’

Advertisement

হুগলির ব্যান্ডেলে দলের পদাধিকারীদের সভা ডেকেছে বিজেপি। সেই সভায় দিলীপ এবং শুভেন্দু দু’জনেই যোগ দিয়েছেন। রয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিন জনকে পাশাপাশি চেয়ারেও বসতে দেখা গিয়েছে ওই সভায়। সেখানে যোগ দেওয়ার আগে আগে সকালেই প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর ‘বিরোধ’ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেছেন, ‘‘আমরা একই দলে এই আদর্শ নিয়ে কাজ করি। হতে পারে কোনও বিষয়ে আমাদের মতভেদ রয়েছে। এটাই গণতন্ত্র। বিজেপিতে গণতন্ত্র আছে। তাই, আমরা কথা বলতে পারি। তার মানে কি আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছি? তৃণমূলের মতো বোমা-বন্দুক নিয়ে লড়াই করতে যাব নাকি!’’

সম্প্রতি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ও মুখ্যমন্ত্রীর ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে ‘ডিসেম্বর’ তরজা— একাধিক বিষয়ে দিলীপের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে শুভেন্দুকে। শুভেন্দুও হাজরার সভা থেকে প্রাতর্ভ্রমণ নিয়ে নাম না করে দিলীপকে বিঁধেছেন। দিল্লি থেকে পাল্টা ‘দম থাকা’র কথা বলেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। শুভেন্দুর ‘তারিখ রাজনীতি’ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেছেন, ‘‘তারিখ পে তারিখ! আমি কোনও তারিখের রাজনীতি করি না।’’

গত বুধবার আসানসোলে শুভেন্দুর কম্বল বিলির কর্মসূচি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন দিলীপ। ওই কর্মসূচিতে পদপিষ্ট হয়ে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রসঙ্গে দিলীপ বলেছেন, ‘‘পুলিশের উপর ভরসা করে এই ধরনের অনু‌ষ্ঠান করা ঠিক নয়। নিজেদেরও প্রস্তুতির দরকার লাগে। এ রাজ্যের মানুষ কিছু পাবেন শুনলেই দৌড়য়। দান-খয়রাতি মানবতার অপমান। কিছু পাওয়ার লোভ দেখিয়ে মানুষকে টেনে আনার রাজনীতিকে আমি সমর্থন করি না।’’ এর জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে শুভেন্দুর সুর অবশ্য নরমই ছিল। নিজেকে শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মী হিসাবে দাবি করে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, ‘‘দিলীপদা আমাদের দলের নেতা। ওঁর পাল্টা আমি কেন মন্তব্য করব? আমি শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মী।’’

তবে, বিজেপি সূত্রে খবর, দুই নেতা নিজেদের সুর নরম করলেও ‘দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত’ থেকে গিয়েছে অন্দরে। সেই কারণেই ‘বিরোধ’ মেটাতে অবশেষে আসরে নামতে হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। বৃহস্পতিবার বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। দলীয় সূত্রে দাবি, দিলীপ ও শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। শুক্রবার রাতে কলকাতায় পৌঁছে ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির দফতরে দুই নেতার সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাঁর। তার আগে দিলীপের নতুন মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই দলবদলুরা গিয়ে দলটাকে হাইজ্যাক করছে। দিলীপবাবুকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারের চেয়ার নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। এক দিকে দিলীপ বিজেপি, এক দিকে সুকান্ত বিজেপি, এক দিকে আদি বিজেপি, এক দিকে দলবদলু বিজেপি, এক দিকে তৎকাল বিজেপি। ওদের গোড়াতেই গলদ। বাংলায় ওদের পার্টির অবস্থা এমনতিই নকুলদানার মতো। তার উপর যদি প্রথম তিন-চার জনের মধ্যেই মতপার্থক্য হয়, সেটা তো হাস্যকর। মর্নিং ওয়াক নিয়ে মারামারি করছে। কী জ্বালা বলুন তো! ফলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গেলে এ ধরনের বিবৃতি দিতেই হবে দিলীপবাবুকে। মানুষ দেখছেন আর হাসছেন। ডিসেম্বর মাস। শীতকাল। সার্কাস দেখাচ্ছে বিজেপি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement