Dhupguri By election

মিতালির দলবদলে কি ধূপগুড়িতে চাপে তৃণমূল? ভোটের আগের দিন অঞ্চল ধরে চলছে হিসাব কষা

উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদল জেতে। কিন্তু সাগরদিঘির ফল বাংলায় সেই ধারণাতে ধাক্কা দিয়েছিল। সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল কিছুটা চাপে পড়েছিল সেই হারে। মঙ্গলবার ধূপগুড়িতে আর এক দফা পরীক্ষা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০২
Dhupguri By election

মঙ্গলবার ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

মঙ্গলবার ভোট। তার আগে সোমবার হিসাব কষতে ব্যস্ত ধূপগুড়ির তৃণমূল। অঞ্চল ধরে ধরে হিসাব চলছে। তার একটা কারণ, প্রচারের শেষ দিনে প্রাক্তন বিধায়ক মিতালি রায়ের বিজেপিতে যোগদান। অনেকের মতে, যে হেতু মিতালির দলবদল একেবারেই আচমকা হয়েছে, ভোটের একদম মুখে তা তৃণমূলের জন্য খানিকটা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। যদিও শাসকদলের কেউই তা প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন না। উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের কথায়, ‘‘ওঁর বিজেপিতে যাওয়া ভোটে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না।’’

Advertisement

কিন্তু সত্যিই কি তাই?

তৃণমূলের অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় মিতালির বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে এবং বিভিন্ন এলাকার ভোট সমীকরণ নিয়ে উদ্বেগ গোপন করছেন না। দলের এক রাজ্য স্তরের নেতা স্পষ্ট করেই বললেন, ‘‘মিতালি কামতাপুরী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। বিধানসভায় হেরে যাওয়ার পর থেকে নানা ধরনের সামাজিক কাজে ময়দানে ছিলেন নিয়মিত। তাই বিরাট না-হলেও কিয়দংশে তাঁর প্রভাব রয়েছে।’’ কোথায় সেই প্রভাব পড়তে পারে? ওই নেতার কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলে কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে ধূপগুড়ি পৌর এলাকায় কিছু প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে।’’ তৃণমূলের আর এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর বানারহাট এলাকায় মিতালি শেষ দিনের প্রচারেও নেমেছেন। সেখানে বিজেপি কিছুটা শক্তিশালী। ওই এলাকার ভোট কেমন হচ্ছে তা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’’

তৃণমূলের একটা অংশ আবার মিতালির দলত্যাগে ক্ষতি তো দেখছেনই না, উল্টে লাভ দেখছেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘মিতালিকে প্রার্থী না করার নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে দলের দিক থেকে। তাঁর সম্পর্কে যে ধারণা জনমানসে তৈরি হয়ে রয়েছে, তা বিজেপিরই বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দেবে।’’

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে মিতালি তৃণমূলের টিকিটে ধূপগুড়ি থেকে জিতেছিলেন। ২০২১-এর ভোটে তিনি হেরে যান বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়ের কাছে। সেই বিষ্ণুপদের মৃত্যুর কারণেই উপনির্বাচন হচ্ছে রাজবংশী অধ্যুষিত ধূপগুড়িতে। শনিবার ধূপগুড়িতে প্রচারে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চেও ছিলেন মিতালি। কিন্তু রবিবার সকালেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের এই প্রাক্তন বিধায়ক। শনিবার অভিষেকের মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি দীপেন প্রামাণিক। রবিবার মিতালির হাতে পদ্ম পতাকা ধরানোকে তার বদলা হিসাবেই দেখছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ।

লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি আসন জিতেছিল বিজেপি। জয়ন্ত রায় ধূপগুড়িতে ‘লিড’ পেয়েছিলেন ১৭ হাজারের বেশি ভোট। সেই মার্জিন ২০২১ সালে কমে এসেছিল সাড়ে চার হাজারে। রাজনৈতিক মহলের অনেকে এটাকে বিজেপির সমর্থনের ক্ষয় হিসাবে দেখছেন। প্রসঙ্গত, এ বার তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই নির্মল ২০২১ সালে দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য দলের কথায় তা প্রত্যাহারও করে নেন। বিধানসভায় মিতালির হারের পর মিতালির অনুগামীরা বলেছিলেন, অন্তর্ঘাত করে তাঁকে হারানো হয়েছে। এই উপনির্বাচনে আবার নির্মলের অনুগামীরা সেই আশঙ্কা করছেন। তাই নির্বাচনের আগের দিন ২৬০টি বুথে এজেন্ট বসানো থেকে বাকি ভোট করানোর বিষয়ে তৃণমূলে এখন বাড়তি তৎপরতা।

উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদলই জেতে। কিন্তু সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার বাংলায় সেই ধারণাকে ধাক্কা দিয়েছিল। সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল কিছুটা চাপে পড়েছিল সেই ফলে। তার অন্যতম কারণ ছিল সংখ্যালঘু ভোটের বাক্সবদল। ধূপগুড়িতে কী হবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

Advertisement
আরও পড়ুন