Semester System In Primary

প্রাথমিকে সিমেস্টার নিয়ে মতের ছড়াছড়ি

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ পর্যন্ত প্রাথমিকে সিমেস্টার চালু হয়নি। সেই সঙ্গে শিক্ষাবিদদের একটি অংশও মনে করেন, সিমেস্টার একাদশ ও দ্বাদশে চললেও প্রাথমিকে ছোট ছোট পড়ুয়াদের পক্ষে উপযোগী নয়।

Advertisement
আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৪

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রাথমিকে সিমেস্টার ব্যাগের বোঝা বাড়াত না কখনওই। বরং ব্যাগের বোঝা কমত। এমনটাই মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের আরও মত, এই পদ্ধতিতে শিশু মনে চাপও কমত। ছোট ছোট শিশুরা আনন্দের সঙ্গে প্রাথমিকের পাঠ নিতে পারত।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শেষ পর্যন্ত প্রাথমিকে সিমেস্টার চালু হয়নি। সেই সঙ্গে শিক্ষাবিদদের একটি অংশও মনে করেন, সিমেস্টার একাদশ ও দ্বাদশে চললেও প্রাথমিকে ছোট ছোট পড়ুয়াদের পক্ষে উপযোগী নয়। কিন্তু বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলছে।

প্রাথমিকে সিমেস্টার চালুর পক্ষপাতীদের একাংশের মতে, প্রাথমিকে সিমেস্টারের রূপরেখা কিন্তু একাদশ, দ্বাদশ বা উচ্চ শিক্ষার সিমেস্টার পদ্ধতির থেকে অনেকটা আলাদা করে তৈরি করা হয়েছিল। এখন প্রাথমিকে তিন বার খাতায়- কলমে পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হয়। তার জায়গায় প্রাথমিকে সিমেস্টার চালু হলে বছরে এক বারই লিখিত পরীক্ষায় মূল্যায়ন হত। প্রথম ছ'মাস কোনও লিখিত পরীক্ষা হত না বলে পর্যদ ঠিক করেছিল। প্রথম সিমেস্টারে শিশুর ফরম্যাটিভ মূল্যায়ন অর্থাৎ সে পড়তে পড়তে ব্যবহারিক শিক্ষা কতটা পাচ্ছে, ক্লাসে কতটা বুঝতে পারছে, তার জানার আগ্রহ কতটা- এই সবের মূল্যায়ন করতেন শিক্ষকেরা। প্রাথমিকে ছোট ছোট পড়ুয়াদের যে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার কথা বলা হয়, তা রূপায়ণেরই পরিকল্পন্য করা হয়েছিল। ফলে স্কুলের রোজকার ব্যাগের বোঝার ভার বাড়ার জায়গায় কমত। পরের ছ’মাসের যে মূল্যায়ন হত, তাতে ৬০ নম্বরের মূল্যায়ন হলেও পাশ-ফেল থাকত না। ফলে যথাযথ বা আরও ভাল ভাবে মূল্যায়ন করা গেলেও পরীক্ষার ভীতি মুক্ত হয়ে স্কুলে যেত শিশুরা।

ইতিমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে চালু হয়েছে সিমেস্টার পদ্ধতি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য কিন্তু মনে করেন, “সিমেস্টার পদ্ধতি প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য উপযোগী নয়। প্রথম সিমেস্টারে যা শেখানো হল, পরের সিমেস্টারে ছোটরা তা ভুলে যেতে পারে। জাতীয় শিক্ষানীতি বা রাজ্য শিক্ষানীতি- কোথাওই প্রাথমিকে সিমেস্টার চালুর কথা বলা হয়নি।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মতেও, “সিমেস্টার পদ্ধতি প্রাথমিকের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রথম সিমেস্টারে একটি শিশু যা পড়ছে, দ্বিতীয় সিমেস্টারে সেটা ভুলে যাবে না তো? এখনকার পদ্ধতিতেই বহু প্রাথমিকের পড়ুয়া বাক্য গঠন বা যোগের অঙ্ক করতে পারে না। সিমেস্টার পদ্ধতিতে ভোলার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।”

অন্য দিকে, হিন্দু স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “সিমেস্টার পদ্ধতিতে পুঁথিগত বিদ্যা শেখার বদলে পড়ুয়ার ব্যবহারিক জ্ঞানেরও বিকাশ ঘটে। তাতে ছোটদের বৌদ্ধিক বিকাশ আরও ভাল হত।” তাঁর মতে, “সারা বছরে তিনটে পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষায় ছোটদের উপরে যা চাপ পড়ে, তার তুলনায় সিমেস্টার ব্যবস্থায় ওরা হালকা থাকত।” বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শবরী ভট্টচার্য বলেন, “সিমেস্টারে পরীক্ষার ঝক্কি কমত। প্রথম সিমেস্টারে কোনও বিষয় খারাপ হলে পরের সিমেস্টারে শুধরে নেওয়ারও সুযোগ পেত।” মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলছেন, “সিমেস্টারের মূল্যায়ন যে পদ্ধতিতে হয়, তার সঙ্গে ব্যাগের বোঝা বাড়ার সম্পর্ক নেই বলেই মনে হয়।”

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিকের সিমেস্টার শুরুর কথা তিনি জানতেনই না। এ দিকে, গত ২৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনক্রমেই বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ সিমেস্টার পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কে ঠিক বলছেন? এই নিয়ে গৌতম কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথাই চূড়ান্ত। প্রাথমিকে সিমেস্টার চালু হচ্ছে না।”

Advertisement
আরও পড়ুন